ঢাকার নদী দখল ও দূষণ রোধে ২০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা

1964
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

ঢাকার চারপাশের নদী দখল ও দূষণরোধে ২০ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে নদীর তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ ও বনায়ন তৈরিতে কাজ শুরু হয়েছে।

নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নদী দূষণরোধে বর্জ্যের উৎসমুখ বন্ধ করে বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে সরকার।

নদীগুলো দূষণ ও দখলরোধ এবং নাব্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে মহাপরিকল্পনাটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

পরিকল্পনাটি ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ, দখল ও নাব্য বিষয়ক সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর শাখা নদী ও খালের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে।

খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, দখলরোধ ও নাব্য বৃদ্ধিকল্পে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে চারটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হলো—এক বছরের মধ্যে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম, তিন বছরের মধ্যে স্বল্পমেয়াদী, পাঁচ বছরের মধ্যে মধ্যমেয়াদী এবং ১০ বছরের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) জানায়, স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী—তিন পর্যায়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে। এরই মধ্যে ১১৩ একর ভূমি অবমুক্ত করা হয়েছে।

প্রথম পর্যায়ে ১০ হাজার সীমানা পিলার স্থাপন, ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, তিনটি ইকোপার্ক ও ১৯ জেটি নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের অধীনে বাবুবাজার ব্রিজ থেকে সদরঘাট পর্যন্ত বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে সৌন্দর্য বর্ধন করা হবে।

বিনোদনের জন্য বুড়িগঙ্গা, তুরাগ নদের তীরে এবং আশুলিয়া ও টঙ্গীতে ইকোপার্ক নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া কেরাণীগঞ্জের খোলামোড়া এলাকায় একটি হেলিপ্যাড নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

নদী রক্ষা টাস্কফোর্স কমিটির সভাপতি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ধাপে ধাপে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রথম পর্যায়ে নদীগুলো ড্রেজিং করতে হবে। পলি পড়ে নদীর বেডগুলো উঁচু হয়ে গেছে, সেগুলোতে আগের জায়গায় নিতে হবে। পানি দূষিত হয়ে গেছে, পানি ট্রিট করতে হবে। পানিতে আর যাতে দূষিত পদার্থ না যায়, সেজন্য সোর্সগুলো বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি, গৃহস্থালি ও শিল্পবর্জ্য যাতে আর নদীতে না যায়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও পরিকল্পনায় রয়েছে।’

মো. তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ‘বর্জ্য সংগ্রহ করে আমরা ডিসপোজাল করে দেব। মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কত টাকা লাগবে, তা ওয়ার্কিং গ্রুপ নির্ধারণ করবে। ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজগুলো ভাগ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবে। এরই মধ্যে সেই কাজ শুরু হয়ে গেছে।’

প্রকল্প সূত্র জানায়, ঢাকার চারদিকে নৌপথে একটি দৃষ্টিনন্দন ও কার্যকরী নৌপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্পে নতুন কিছু স্থাপনা সংযোজন করে সংশোধিত প্রকল্প (আরডিপিপি) তৈরি করে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আরডিপিপি’র ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় এক হাজার ১৮১ কোটি টাকা।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তারা অনুমোদিত এই খসড়া এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করবে।’

ক্র্যাশ দিয়ে শুরু

প্রাথমিকভাবে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এজন্য নদীর তীর দখলমুক্ত করা হচ্ছে, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এরপর ওয়াসার নেতৃত্বে স্যানিটেশনের কাজ শুরু হচ্ছে। দূষিত পানি যেন নদীতে না যায়, সেজন্য ঢাকার স্যুয়ারেজ লাইনও ঠিক করার কথা রয়েছে এই মহাপরিকল্পনায়।

মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্জ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। বর্জ্য যাতে নদীতে এখানে-সেখানে ডাম্প করা না হয় সেজন্য বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে কাজ করছি।’

এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক বলেন, ঢাকা শহরের চারদিকে নৌপথ উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এই প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে প্রকল্পের তিন দশমিক ৫০ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, তিন হাজার স্থায়ী সীমানা পিলার স্থাপন ও বৃক্ষরোপণসহ অন্যান্য কাজ শেষ হয়েছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পটিতে আরডিপিপিতে সাত হাজার ৫৬২টি স্থায়ী সীমানা পিলার, ৮০টি আরসিসি জেটি, ২৯১টি বসার বেঞ্চ, ১৪টি ভারী জেটি, পার্কিং ইয়ার্ড ও ইকোপার্কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নদী দখল রোধ হবে এবং দৃষ্টিনন্দন পরিবেশে যাত্রী ও মালামাল পরিবহণ ব্যবস্থার সৃষ্টি হবে।’

বিআইডব্লিউটিএ’র সূত্র অনুযায়ী, ২০২৩ সালে জুনে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন