ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ইভ্যালির দায় ছিল ৪০৩ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমানে দেনার পরিমাণ হাজার কোটিরও বেশি।
শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাবের সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির দেনা দাঁড়িয়েছে ৪০৩ কোটি টাকা। তাদের সম্পদ ছিল ৬৫ কোটি টাকা। কিন্তু বর্তমানে দেনার পরিমাণ প্রায় হাজার কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ইভ্যালির প্রায় ৩০ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি গেটওয়েতে ৩০-৩৫ কোটি টাকা আটকে আছে, যেগুলো গ্রাহকের টাকা।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে তিনি আরও বলেন, নানা পণ্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া হয়েছে ২১৪ কোটি টাকা এবং গ্রাহক ও অন্যান্য কোম্পানির কাছে বকেয়া আছে ১৯০ কোটি টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, ইভ্যালিতে পূর্বে প্রায় ২ হাজার ব্যবস্থাপনা স্টাফ ও ১ হাজার ৭০০ অস্থায়ী কর্মী ছিল। বর্তমানে ব্যবস্থাপনা স্টাফ পদে ১ হাজার ৩০০ জন ও অস্থায়ী পদে প্রায় ৫০০ জন কর্মী আছেন। পূর্বে কর্মীদের মাসিক বেতন বাবদ প্রায় ৫ কোটি টাকা দেওয়া হতো। বর্তমানে তা দেড় কোটিতে দাঁড়িয়েছে। গত জুন থেকে অনেকের বেতন বকেয়া আছে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, তিনি এবং তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন পদাধিকারবলে ইভ্যালি থেকে মাসে ৫ লাখ টাকা করে বেতন নিতেন বলেও জানান এই র্যাব কর্মকর্তা। এছাড়া তারা কোম্পানির টাকায় অডি ও রেঞ্জ রোভার দুটি দামি গাড়ি ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করেন।’
‘দায় মেটাতে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বৃদ্ধি করার আবেদন রাসেলের একটি অপকৌশল মাত্র। সবশেষ দায় মেটাতে ব্যর্থ হলে ‘দেওলিয়া ঘোষণার’ পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি,’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
নতুন গ্রাহকদের ওপর দায় চাপিয়ে পুরাতন গ্রাহকদের আংশিক অর্থ ফেরত অথবা পণ্য ফেরত দিত ইভ্যালি। দায় ট্রান্সফারের দুরভিসন্ধিমূলক অপকৌশল চালিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। এভাবে প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কে গ্রাহক যত তৈরি হয় দায় তত বাড়ে।
দায়ের পরিমাণ বাড়ায় এক পর্যায়ে ইভ্যালিকে দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা করছিলেন ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল, উল্লেখ করে র্যাব জানায়, সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ই-কমার্স ব্যবসা সংক্রান্ত যে নীতিমালা করা হয়েছে তার আলোকে ব্যবসা পরিচালনা কিংবা গ্রাহকদের দেনা পরিশোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব হতো না।
এদিকে শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টার দিকে হাজির করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশার থানার উপ-পরিদর্শক ওয়াহিদুল ইসলাম।
শুনানি শেষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিন দুপুর ২টার দিকে তাদের আদালতে হাজির করে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের তোলা হয় আদালতে।