করোনা মহামারিকে ভয়াবহ ভাবলেও এরচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় আসছে মানবসভ্যতার জন্য। সেই ভয়াবহতার নাম জলবায়ু পরিবর্তন। পরিবেশ দূষণের ফলাফল এ জলবায়ু পরিবর্তন একটু একটু করে চলে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রণের বাইরে। বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। গলছে মেরু অঞ্চলের বরফ। বিপৎসীমা ছাড়াচ্ছে সমুদ্র ও নদীর পানি। তলিয়ে যাচ্ছে নিম্নাঞ্চল।
বাড়ছে ভারি বৃষ্টিপাত, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাড়ছে দাবানল। ভিটেবাড়ি ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। বিশ্বজুড়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যাও।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী তিন দশকে ২১ কোটি ৬০ লাখ মানুষকে ঘর-বাড়ি ছাড়া হতে হবে। বিশ্বজুড়ে কার্বন নিঃসরণ কমাতে এবং সম্পদের বৈষম্য কমিয়ে আনতে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি।
সংবাদ মাধ্যম এপি আর আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি ‘গ্রাউন্ডসওয়েল’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পানির অভাব দেখা দিচ্ছে, ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে ৬টি অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ ‘জলবায়ু অভিবাসী’ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসলে ২০৩০ সালের মধ্যেই শুরু হবে ভয়াবহতা, ২০৫০ সালে যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। ঝুঁকিতে আছে লাতিন আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা, সাব-সাহারান আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চল।
অন্যদিকে কার্বন নিঃসরণ কমানো,অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি ও টেকসই উন্নয়নসহ জলবায়ুবান্ধব সব উদ্যোগ নেওয়া হলেও অন্তত ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হবে।
বিশ্বব্যাংকের সমীক্ষায় বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে ভঙ্গুর উপকূল রেখা ও কৃষির ওপর জনসংখ্যার নির্ভরতার কারণে সাব-সাহারান আফ্রিকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে আর অভিবাসীর সংখ্যা এ অঞ্চল থেকেই বেশি হবে। এখন সেখানকার ৮ কোটি ৬০ লাখ মানুষ দেশের সীমানার মধ্যেই একস্থান থেকে অন্যস্থানে পাড়ি জমাচ্ছে।
তবে উত্তর আফ্রিকায় জলবায়ু অভিবাসীর সংখ্যাও কম হবে না। সেখানকার ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ জলবায়ু অভিবাসী হচ্ছে, যা এখানকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯ শতাংশের সমান। উত্তর-পূর্ব তিউনিসিয়া, উত্তর-পশ্চিম আলজেরিয়া, পশ্চিম ও দক্ষিণ মরক্কো এবং কেন্দ্রীয় অ্যাটলাসে পানি সংকট বাড়ায় এখানকার এতো মানুষ অভিবাসী হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু অভিবাসী হতে পারে ৩ কোটি ৫৭ লাখ মানুষ। দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু অভিবাসীর অর্ধেকই হবে বাংলাদেশি। জরুরি উদ্যোগ না নিলে বন্যা ও ফসলের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটির প্রায় দুই কোটি মানুষ অভিবাসী হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এর মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি থাকবে। দেশের উপকূলীয় এলাকার ১ কোটি ৩৩ লাখ মানুষ আছে জলবায়ু পরিবর্তনে অভিবাসী হওয়ার ঝুঁকিতে।
প্রতিবেদনে আরও সতর্ক করে বলা হয়েছে, পরবর্তী দশকের মধ্যে অভিবাসন হটস্পট দেখা দিতে পারে এবং ২০৫০ সাল নাগাদ তা আরো তীব্র আকার ধারণ করতে পারে। এজন্য জলবায়ু অভিবাসীরা যেসব এলাকায় স্থানান্তরিত হবে এবং তাদের ছেড়ে যাওয়া অঞ্চলে যারা থাকবে তাদের সহায়তার জন্য দ্রুত পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আগামী দশক থেকেই নেমে আসবে অনিয়ন্ত্রিত বিপর্যয়।