আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা না দিলেও দুই বিষয়ে ‘ছাড়’ পাবে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুটি বিষয় হলো- পোশাক বা ইউনিফর্ম পরার ক্ষেত্রে এবং ক্লাসে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে। তবে সেক্ষেত্রে থাকবে কিছু শর্ত।
স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত আসার পর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজার ও বিপণিবিতানগুলোতে শিক্ষাসামগ্রী বিশেষ করে জুতা-মোজা, ব্যাগ এবং স্কুল ড্রেস কিনতে দেখা যায়। বিশেষ করে নতুন পোশাক তৈরি করার জন্য দরজির দোকানেগুলোতে দেখা গেছে উপচেপড়া ভিড়। পোশাক বানাতে এক প্রকার হিমশিম খাচ্ছেন দর্জিরা। দিন-রাত কাজ করেও কমপক্ষে এক সপ্তাহের আগে স্কুলের পোশাক তৈরি করে দিতে পারছেন না তারা। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষগুলো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সশরীর ক্লাস শুরুর প্রথম কয়েক দিন শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট পোশাক বা ইউনিফর্ম পরার বিষয়ে ছাড় দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান আপাতত শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্মের কাছাকাছি রঙের পোশাক পরে স্কুল বা কলেজে আসতে বলেছে।
রাজধানীর নেভি স্কুল অ্যান্ড কলেজ খিলক্ষেত শাখার এক অভিভাবক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তিনি গত বুধবার স্কুল থেকে একটি নোটিশ পান, যেখানে বলা হয়েছে, প্রথম দুই সপ্তাহ সাধারণ শোভন পোশাকে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারবে। ইউনিফর্মের বাধ্যবাধকতা থাকবে না। তবে এই সময়ের মধ্যে স্কুলের নির্ধারিত দরজির কাছ থেকে অবশ্যই ইউনিফর্ম বানিয়ে নিতে হবে।
রাজধানীর আরেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্যার জন উইলসন স্কুলও শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম পরে আসার বিষয়টি শিথিল করেছে। স্কুলটির অধ্যক্ষ সাব্রিনা শহীদ বলেন, স্কুলে আসতে হলে শিক্ষার্থীদের নতুন ইউনিফর্ম বানাতে হবে, বিষয়টি তারা বুঝতে পেরেছেন। এ জন্য স্কুল খোলার পর প্রথম দিকে ইউনিফর্ম বাধ্যতামূলক না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য অভিভাবকদের স্কুলের নির্দিষ্ট টি-শার্ট সংগ্রহ করতে বলা হবে। তিনি বলেন, অন্তত একই রকম টি-শার্ট পরলেও শিক্ষার্থীদের মধ্যে একধরনের একতার বোধ তৈরি হবে।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বা দেহে কোনো ধরনের উপসর্গের কারণে শিক্ষার্থীরা সশরীরে ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারলে তাদেরকে ‘অনুপস্থিত’ গণ্য করা হবে না বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তবে সেক্ষেত্রে দেখাতে হবে উপযুক্ত প্রমাণ।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, যদি কোনো শিক্ষার্থী তার পরিবারের কোনো সদস্যের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ক্লাসে আসতে না পারে, সেক্ষেত্রে তাকে অনুপস্থিত হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পরিবারের সদস্যের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: ‘এক’ কারণে বন্ধ হতে পারে স্কুল-কলেজ!
সচিব বলেন, এক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের পজিটিভ রিপোর্টকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে থাকতে পারবে এবং তাদেরকে অনুপস্থিত হিসেবে গণ্য করা হবে না।
এরআগে ৩ সেপ্টেম্বর স্কুল-কলেজ খোলার ঘোষণার দিন এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, কারো বাড়িতে কারো মধ্যে যদি করোনাভাইরাস উপসর্গ থাকে তার ক্লাসে আসার দরকার নেই। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অ্যাসেম্বলি হবে না।
প্রসঙ্গত, স্কুল খোলার পর এসএসসি ও এইচএসসি এবং পিইসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস সপ্তাহে ৬ দিন হবে। প্রথম থেকে চতুর্থ এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ক্লাস হবে সপ্তাহে একদিন। এবারের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হলে নবম শ্রেণির পাঠদানের দিন সংখ্যা বাড়বে। আর পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্য শ্রেণির পাঠদানের দিন সংখ্যাও বাড়বে। পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় জেএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সিদ্ধান্ত হবে। একই নীতি হবে পিইসি পরীক্ষার ব্যাপারে।