করোনা যখন কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে তখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু। রাজধানীর পূর্ব জুরাইনে এখন ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী।
ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু, পূর্ব জুরাইনে ঘরে ঘরে রোগী
আতঙ্কে দিশেহারা স্থানীয়রা। এলাকাবাসী বলছেন, এর দায় নিতে হবে সিটি করপোরেশনকেই। আর মশা মারার পর্যাপ্ত ওষুধ না থাকার দোহাই দিচ্ছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যকরী ওষুধ ছিটানোর আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।
পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দাদের মাঝে এখন মৃত্যু আতঙ্ক। মাত্র ১০ গজের ব্যবধানে এখানে দুজনের প্রাণ কেড়েছে ডেঙ্গু।
রাজধানীর পূর্ব জুরাইনের পলাশ নামে এক ব্যক্তির শিশু কন্যাটির অকাল মৃত্যুতে তার বুক ভাঙা কান্না যেন থামছে না। যমজ ফুটফুটে ইসরাত- নুসরাত দুই বোন ছিল। ছোট নুসরাতকে কেড়ে নিল ডেঙ্গু।
জুরাইনের অলিগলিতে এখন স্বজন হারানোর শোক। ডেঙ্গুতে মা হারিয়েছে মরিয়ম আক্তার নামে এক নারী। এ এলাকায় এমন কোনো ঘর নেই যেখানে ডেঙ্গু রোগী নেই। এক বাসাতেই আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন। আর চলতি মাসে জুরাইনেই মারা গেছেন ৮ জন।
মরিয়ম আক্তার বলেন, ’আমার মায়ের ব্রেনে ইনফেকশন হয়ে কিডনিতে ধরে যায়, যার কারণে আর মাকে বাঁচানো যায়নি।’
আরেকজন বলেন, প্রতিটি ঘরে এখন ডেঙ্গু রোগী, কোনো অবস্থাতেই আমরা ভালো নেই। একটি পরিবারে ১৩ জন সদস্য তার মধ্যে ৯ জনেরই ডেঙ্গু হয়েছে। এক বৃদ্ধ বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে আমাদের ভয়, করোনা নিয়ে কোনো ভয় নেই।
এমন ভয়াবহ অবস্থার মধ্যেও জুরাইনের বিভিন্ন বাসার ছাদে জমে আছে পানি, দেখা মিলছে লার্ভার। স্থানীয়রা বলছেন, মশার লার্ভা নিধনে উদ্যোগ নেই সিটি করপোরেশনের। যদিও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, সিটি করপোরেশন কোনো কাজ করছে না। একবার এসে ধোয়া দিয়ে চলে যায়, এটা তো আসলে ডেঙ্গু মারার নিয়ম না।
৫৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, ওষুধ দিয়ে যাচ্ছে তবে মানুষকে তো সচেতন হতে হবে। ঘরের আশপাশে ও ছাদে পানি জমে আছে, সেগুলো তো আপনাকে পরিষ্কার করতে হবে। এটা তো জনগণের দায়িত্ব তার নিজ বাসা পরিষ্কার রাখা।
চিকিৎসকরা বলছেন, পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হচ্ছে। ডেঙ্গুতে মধ্য বয়স্কদের পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে অন্তঃসত্ত্বা নারীদেরও।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফুল হক বলেন, ডেঙ্গু একটি রক্তবাহিত রোগ তাই অন্তঃসত্ত্বা নারীদের তাদের পেটের সন্তানও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মৃত সন্তানও প্রসব হচ্ছে।
জুরাইন ছাড়াও রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, মিরপুর, উত্তরায় ডেঙ্গুর হটস্পট বলছে সিটি করপোরেশন। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এলাকাভিত্তিক কাজ করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, রাজধানীর এই এলাকাগুলো যেহেতু ডেঙ্গুর জন্য হটস্পট বলা হচ্ছে সেক্ষেত্রে অন্যান্য এলাকা থেকে ফগ ও স্প্রে মেশিন এনে একসঙ্গে স্প্রে করা উচিত।
রাজধানীর নির্দিষ্ট কিছু এলাকা নয়, সব এলাকাতেই বাড়ছে ডেঙ্গু। ঢাকা শিশু হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্রই বলে দিচ্ছে এর ভয়াবহতা। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ। শুধু শিশুরাই নয়, ঝুঁকিতে রয়েছেন বয়স্করাও। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শুক্রবারও বিভিন্ন হাসপাতালে ১৮৪ জন ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর এ পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে, এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজারের বেশি রোগী।
করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে এবার জুলাই মাস থেকে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, যাতে দুই মাসের কম সময়েই ৪০ জনের মৃত্যু দেখল দেশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশে এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৯ হাজার ৩০৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যাদের ৮ হাজার ২৩০ জন সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন।
সবশেষে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে প্রায় ১৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল।