দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রানওয়ে হতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দরে। বর্তমানের নয় হাজার ফুটের দীর্ঘ রানওয়েকে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে উন্নীত করতে বঙ্গোপসাগরের তলদেশে ব্লক তৈরি করে বাড়ানো হচ্ছে রানওয়ে। এই নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পেয়েছে চীনের দুইটি প্রতিষ্ঠান।
বেবিচক বলছে, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে ঘিরে তৈরি হবে এভিয়েশনের হাব। আর সারাবিশ্ব থেকে সু-পরিসর বিমান কক্সবাজারে ওঠানামা করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী।
কক্সবাজার বিমান বন্দরের রানওয়ে ৯ হাজার ফুট। এটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে ১ হাজার ৭০০ ফুটে। সম্প্রসারিত হতে যাওয়া রানওয়ের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ ফুটই থাকবে সমুদ্রের ওপর।
প্রথমে সাগরের নিচে স্থাপন করা হবে জিওটিউব, ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে পানি। শুরু হবে খনন প্রক্রিয়া ও বালু ভরাট কার্যক্রম। এরপর প্রাথমিক পর্যায়ে হতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে হবে বালুর স্তর বিন্যাস। চূড়ান্ত পর্যায়ে হবে রানওয়ের জন্য বালুর স্তর বিন্যাস। তারপর হবে পাথরে স্তর বিন্যাস এবং নিচ্ছিদ্রকরণ, পিচ ঢালাই ও নিচ্ছিদ্রকরণ। এভাবেই তৈরি হবে রানওয়ে এবং প্রাথমিক সমুদ্র হতে রক্ষাকারী বাঁধ। এর পরপরই হবে রানওয়ের শোভাবর্ধন ও নির্দেশক বাতি স্থাপন।
সমুদ্র তলদেশের উপর ব্লক তৈরি করে এর উপর স্থাপনা নির্মাণ করা। দেশে এই প্রথম কোন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে এই প্রক্রিয়ায়। সমুদ্রের কিছু অংশ ভরাট করে সেখানে নির্মাণ করা হবে রানওয়ে। সমুদ্র ছুঁয়ে আকাশে উড়বে বিমান।
কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, দেশের প্রথম সবচেয়ে বড় রানওয়ে হতে যাচ্ছে কক্সবাজার বিমানবন্দরের। এই রানওয়ে হলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বিমানও এখানে নামতে পারবে।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আব্দুল্লাহ আল ফারুক বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের বর্তমান রানওয়ে ৯ হাজার ফুট। যেটি বর্ধিত হয়ে হবে ১০ হাজার ৭০০ ফুটে। যা বাংলাদেশে প্রথম সবচেয়ে বড় রানওয়ে। এখানে বড় বড় বোয়িং এবং বিশ্বে বড় বড় বিমানগুলোও এই রানওয়েতে নামতে পারবে। আশা করছি, আগামী বছরই কক্সবাজার বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে যাত্রা শুরু করবে।
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) জানায়, বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ একটি রানওয়ে রয়েছে। এটি ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করার কাজ চলছে। এর মধ্যে এক হাজার ৩০০ ফুট থাকবে সমুদ্রের মধ্যে। কক্সবাজার বিমানবন্দরের মহেশখালী চ্যানেলের দিকে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সম্প্রসারিত হচ্ছে এই রানওয়ে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নতুন প্রজন্মের উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৭৭-৩০০ ইআর, ৭৪৭-৪০০ ও এয়ারবাসের মতো উড়োজাহাজ সহজেই ওঠা-নামা করতে পারবে। প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ৫৬৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন করছে বেবিচক।
এদিকে শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকেলে কক্সবাজার বিমানবন্দরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি দেখতে আসেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান।
এ সময় তিনি বলেন, প্রথমে ৯ হাজার ফুট থেকে আরও তিন হাজার ফুট সমুদ্র কূলে রানওয়ে সম্প্রসারণের কথা ছিল। কিন্তু অনেক গবেষণা ও কক্সবাজারের পরিবেশের কথা চিন্তা করে রানওয়ে ১ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত হয়।
মফিদুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। রানওয়ে সম্প্রসারিত হলে দেশের পর্যটনসহ অর্থখাতে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। এটি কক্সবাজারবাসীর জন্য আনন্দের। এছাড়াও এ বিমানবন্দরকে ঘিরে একটি এভিয়েশন হাব তৈরি হবে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান আরও বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ কাজ শেষ হলেই এখানে ওঠা-নামা করতে পারবে ৩৮০-এর মতো সুপরিসর এয়ারবাস।
আগামী ২৯ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সম্প্রসারণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই রানওয়ে সম্প্রসারণকে ঘিরে নানা রঙে সেজেছে কক্সবাজার শহর। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে এলইডি স্ক্রিন। যাতে দেখানো হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো শহর।
এদিকে শুক্রবার (২৭ আগস্ট) দুপুরে কক্সবাজার আসেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এসময় তিনি বলেন, কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিকমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চলমান আছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিমানবন্দরের উন্নয়ন। চলমান কাজ সম্পন্ন হলে রানওয়ের আয়তন বাড়বে, অত্যাধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন হবে বিমানবন্দর।
তিনি আরও বলেন, আশা করছি, পুরো প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজারে সহজে যাতায়াতসহ নানাবিধ সুবিধা ভোগ করবেন।