করোনা সংকটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) বন্ধ থাকলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী মেস বা বাসা ভাড়া নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। টিউশনি করে নিজেরসহ পরিবারের খরচ মেটাচ্ছেন। অনেকে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন চাকরির। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সেশনজটের পাশাপাশি আর্থিক সংকটেও আছেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত খুলে দেয়ার দাবি তাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানালেন, শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া শেষ হলে এবং সিন্ডিকেট সভার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হবে।
সুনামগঞ্জের ছেলে সোহাগ মিয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। পুরো পরিবার কৃষিকাজের ওপর নির্ভর। বাবার অবর্তমানে ৪ বোন আর এক ভাইয়ের পরিবারে নিজের পড়ার খরচের পাশাপাশি টিউশনি করে সংসারে আর্থিক সহায়তা করেন। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিজের লেখাপড়ার ক্ষতির পাশাপাশি কয়েকটি টিউশনি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন। এখন মেসে থেকে দুটি টিউশনি করছেন।
সোহাগ বলেন, ঢাকা শহরে মেসে উঠা-থাকা-খাওয়া সব ধরনের সমস্যা আছে, খরচও বেশি। আমার আয় বলতে ছিল একটা/দুইটা টিউশনি। টিউশনি দিয়ে হলে আমার ভালোভাবেই চলতো। কিন্তু মেসে যে বাড়তি খরচ লাগতেছে, সেই ক্ষেত্রে আমি আটকে যাচ্ছি।
সোহাগের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীর দিকে তাকিয়ে থাকে তার পরিবার। একদিকে নিজের পড়াশোনা, শেষ হয়ে যাচ্ছে চাকরির বয়স, অন্যদিকে পরিবারের দুশ্চিন্তা।
এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা সাবলেট বাসায় থাকি। টিউশনি করি চলি। যেহেতু দীর্ঘদিন আমাদের হল বন্ধ, আমাদের একটা বিশাল অংকের টাকা দিয়েই থাকতে হয় সাবলেট বাসায়। পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। সেই জায়গা থেকে বাড়ি থেকে প্রতি মাসে টাকা নেয়ার মতো অবস্থায়ও সবসময় থাকে না।
হল বন্ধ থাকলেও প্রায় ৭০ ভাগ শিক্ষার্থী এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা বলছেন, অনলাইন ক্লাসের খুব বেশি সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে দেখা গেল, শ্রেণিকক্ষ বন্ধ থাকলেও অনেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির বারান্দায় ও আশপাশে বসে ক্লাস এবং চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা চাইছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে অবিলম্বে হল খুলে দেয়া হোক।
এক শিক্ষার্থী বলেন, ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকার আওতায় এসেছেন। বাকী থাকলো আর ২০ শতাংশ। তাদের যদি টিকার আওতায় আনা যায়, সেই ক্ষেত্রে মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান জানালেন, শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, অনলাইন পরীক্ষায় শতভাগ জয়েন করতে সবাই সক্ষম। কিভাবে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে কত দ্রুত চলে আসা যায়, শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দেয়া যায়- তা আমরা ভাবছি।
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। বলেন, অনুমান নির্ভর কথা না বলা উচিত। সম্ভাব্য সব বিষয় খতিয়ে দেখে তারপরে মূলত সিদ্ধান্তে আসতে হবে। সেই পরিকল্পনা গ্রহণও জরুরি কাজ। সেদিকে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।
সেশনজট দূর করতে ও শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে বিভাগভিত্তিক পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান উপাচার্য।