নিউজ ডেস্ক, নিউজগার্ডেন বিডি.কম
মাঝারি ও ছোট জাহাজ নির্মাণ খাতে বাংলাদেশের বছরে প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার রফতানির সুযোগ রয়েছে—এমন স্বপ্নই দেখিয়েছিল ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। এ ব্যবসার মূলধন জোগাতে দেশের ১৮টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজার থেকে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ নিয়েছে কোম্পানিটি। যদিও বিনিয়োগ অনুযায়ী কার্যাদেশ না পাওয়া, নির্ধারিত সময়ে জাহাজ সরবরাহে ব্যর্থতা ও উদ্যোক্তাদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে এখন মৃতপ্রায় ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ থাকলেও নগদ অর্থের সংকটে বন্ধ হয়ে গিয়েছে কোম্পানিটির কার্যক্রম। খবর: বণিক বার্তা।
২০০০ সালে যাত্রার পর প্রায় দেড় দশক ধরে বিভিন্ন ক্যাটাগরির জাহাজ নির্মাণ ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জাহাজ রফতানির মাধ্যমে নিজেদের এ খাতের বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও উদারহস্তে ঋণ দিয়েছে কোম্পানিটিকে। পুঁজিবাজার থেকেও ২০১৪ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ারপ্রতি ২৫ টাকা প্রিমিয়ামে ১৫৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে কোম্পানিটি।
গত দুই দশকে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড দেশে ও বিদেশে ১৫০টি জাহাজ সরবরাহ করেছে। এর মধ্যে ১২টি দেশে ৩৩টি জাহাজ রফতানির মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও এনেছে বাংলাদেশে। একসময় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতীরের শিপইয়ার্ডে দিন-রাত তিন হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করলেও বর্তমানে প্রায় জনশূন্য রয়েছে ইয়ার্ডটি। বর্তমানে শ্রমিকদের বেতন দিতে পারছে না ওয়েস্টার্ন মেরিন। এখনো আটটি জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ থাকলেও সেগুলোর কোনোটিই সরবরাহের সামর্থ্য নেই প্রতিষ্ঠানটির। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জাহাজ সরবরাহ করতে না পারায় সম্প্রতি দুবাইয়ের আল রশিদ শিপিং লিমিটেড ওয়েস্টার্ন মেরিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য একটি টাগবোট (সাহায্যকারী জলযান) নির্মাণের চুক্তির পর কয়েক দফায় ২৩ কোটি টাকা বিল সংগ্রহ করলেও এখন পর্যন্ত সেটি হস্তান্তর করতে পারেনি ওয়েস্টার্ন মেরিন। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টাগবোট কিনতে ৩৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় চুক্তি করেছিল। ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে টাগবোটটি বন্দর কর্তৃপক্ষকে সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু সিংহভাগ অর্থ নেয়ার পরও শর্ত ভঙ্গ করায় বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি পায়রা বন্দরের জন্যও একটি টাগবোট নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে ওয়েস্টার্ন মেরিন। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেটিও সরবরাহ দেয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, ওয়েস্টার্ন মেরিনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ১৫-১৬ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিকদের ৮-১০ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। সম্প্রতি পাওনার কিছু অংশ পরিশোধ করা হলেও এখনো বকেয়া আছে তাদের কয়েক মাসের বেতন-ভাতা। এমনকি ইজারা নেয়া জমির টাকা দিতে না পারায় শিপইয়ার্ডের জায়গায় ইজারাদাতা প্রতিষ্ঠান তাদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওয়েস্টার্ন মেরিনের কাছে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনাদায়ী অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৮৭ কোটি ১৪ লাখ ৩২ হাজার ২২৫ টাকা। বর্তমানে এ দেনার পরিমাণ বেড়ে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এছাড়া ব্যক্তিগত অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণসহ দায় ২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। খেলাপি থাকা এসব ঋণের কারণে কোনো ব্যাংকই নতুন করে এ প্রতিষ্ঠানে অর্থায়ন না করায় কার্যত বন্ধের পথে কোম্পানিটি।
বিভিন্ন ব্যাংকের দেয়া তথ্যে দেখা গেছে, ওয়েস্টার্ন মেরিনের কাছে বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৭২১ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়ার ৪২৬ কোটি, সোনালী ব্যাংকের ১১৭ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১১১ কোটি, এনসিসি ব্যাংকের ৪০ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকের ৭২ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ৫৮ কোটি, পূবালী ব্যাংকের সাড়ে ৫ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংকের ৫ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাড়ে ৩ কোটি, মাইডাস ফাইন্যান্সের ৪৫ কোটি, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ৩৬ কোটি, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সের ৩২ কোটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ২২ কোটি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ১৭ কোটি, ন্যাশনাল ফাইন্যান্সের ১৩ কোটি, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ১১ কোটি ও ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের ২ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ব্যাংক ছাড়াও ওয়েস্টার্ন মেরিনের কাছে খাতসংশ্লিষ্ট ১৫-২০ জন ব্যবসায়ীর অন্তত ৫০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে আটলান্টিক মেরিনের কর্ণধার নাছির উদ্দিন ৮০ লাখ টাকা, দেশ শিপ বিল্ডিংয়ের কর্ণধার মো. সরওয়ার আড়াই কোটি টাকাসহ আরো কয়েকজন ব্যবসায়ী ওয়েস্টার্ন মেরিনের বিরুদ্ধে ৮-১০টি চেক ডিজঅনার মামলা করেছেন।
রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখার উপমহাব্যবস্থাপক মো. মনির হোসাইন বলেন, শুরুতে ভালো ব্যবসা করায় প্রতিষ্ঠানটিকে সহজে ঋণ দিয়েছিল ব্যাংকগুলো। কিন্তু সম্প্রতি পরিচালকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, আশানুরূপ কার্যাদেশ না পাওয়ায় ব্যবসা নিয়ে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে তারা এখন ঋণ শোধ করতে পারছে না। পাশাপাশি অব্যবস্থাপনার কারণে নতুন কোনো জাহাজ নির্মাণ করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
আর্থিক সংকট ও দুরবস্থার জন্য ওয়েস্টার্ন মেরিনের কর্ণধাররা প্রচলিত ঋণের সুদহারকে দায়ী করলেও খাতসংশ্লিষ্টরা উদ্যোক্তাদের অদূরদর্শিতা ও পারস্পরিক দ্বন্দ্বকেই মূল কারণ বলে মনে করেন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতিটি জাহাজ নির্মাণ ও বিদেশী ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর উপলক্ষে জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ নির্মাণ ও রফতানি করেছে। তবে ব্যবসার পরিধি ও বিনিয়োগ অনুযায়ী আশানুরূপ কার্যাদেশ না পাওয়া, যথাসময়ে কার্যাদেশ পাওয়া জাহাজ সরবরাহ করতে না পারা এবং পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে ক্রমেই পতনের দিকে গেছে কোম্পানিটির ব্যবসা।
ওয়েস্টার্ন মেরিনকে ঋণ দেয়া একটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ব্যাংক থেকে যে ঋণ নিয়েছে ওয়েস্টার্ন মেরিন তার দ্বিগুণ আয়ও করেছে। কিন্তু অজানা কারণে প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকঋণ পরিশোধে বরাবরই অনীহা দেখিয়ে আসছে। মূলত আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়া, অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ওয়েস্টার্ন মেরিন আস্থা হারিয়েছে। নতুন করে অর্থ সংগ্রহ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি গতিশীল করার আর কোনো উপায় নেই। যদিও দীর্ঘদিন ধরে ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় দেশের কোনো ব্যাংকই নতুন করে ঋণ দেবে না।
ব্যাংকের কাছ থেকে সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোম্পানিটি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়। এজন্য ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিশেষ ধরনের জাহাজ নির্মাণে ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পে ১.২৫ আর: ১ অনুপাতে (বিদ্যমান একটি শেয়ারের বিপরীতে ১ দশমিক ২৫টি শেয়ার) রাইট শেয়ার ইস্যুর সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটির পর্ষদ। এক্ষেত্রে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের সঙ্গে শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা প্রিমিয়াম নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে বেশ কয়েক দফায় রাইট শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব সংশোধন করে সর্বশেষ প্রিমিয়াম ছাড়াই ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ১ আর: ২ অনুপাতে (বিদ্যমান একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি শেয়ার) ৯ কোটি ৯৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩০১টি সাধারণ শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে বিদ্যমান বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৯৯ কোটি ৭৬ লাখ ৮৩ হাজার ১০ টাকা সংগ্রহের ঘোষণা দেয়া হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কোম্পানিটির রাইট শেয়ার ইস্যুর প্রস্তাব বাতিল করে দেয়।
আইপিওর পাশাপাশি রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিলেও বিনিয়োগকারীদের বরাবরই ঠকিয়েছে কোম্পানিটি। তালিকাভুক্তির পর থেকে নামমাত্র নগদ লভ্যাংশের বিপরীতে বছর বছর বোনাস লভ্যাংশের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের হাতে শেয়ার ধরিয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি। সর্বশেষ ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য দশমিক ৫০ শতাংশ নগদ এবং আড়াই শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। সে হিসেবে আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার নগদ লভ্যাংশ দেয়ার কথা। যদিও ঘোষিত এ লভ্যাংশের অর্থও বিনিয়োগকারীদের এখন পর্যন্ত পরিশোধ করেনি। এ বছরের মার্চে লভ্যাংশ বিতরণসংক্রান্ত প্রতিবেদন চেয়ে কোম্পানিটির কাছে চিঠি দিয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে স্টক এক্সচেঞ্জে কোনো হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি। লভ্যাংশের অর্থ পরিশোধ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের কোম্পানি সচিব খায়রুল ফারহান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গত পাঁচ বছরের আর্থিক পারফরম্যান্স পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের আয় হয়েছিল ২৮১ কোটি টাকা, যা ২০১৮-১৯ হিসাব বছরে বেড়ে প্রায় ৩১৩ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এর পরের ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির আয় কমে দাঁড়ায় ২২৮ কোটি টাকায়। একইভাবে পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৫-১৬ হিসাব বছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা ছিল ২৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা ২০১৮-১৯ হিসাব বছর শেষে ৫৪ কোটি ৮১ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এর পরের ২০১৯-২০ হিসাব বছরে কোম্পানিটির মুনাফা কমে ১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। অবশ্য আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ না করার কারণে সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২০-২১ হিসাব বছরের আর্থিক ফলাফল সম্পর্কে কোনো হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যায়নি।
দুই দশক ধরে ভালো ব্যবসা করলেও কোম্পানির বর্তমান আর্থিক দুরবস্থার বিষয়ে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন তারেক এম নসরুল্লাহ বলেন, জাহাজ নির্মাণ শিল্প বাংলাদেশে নতুন। ওয়েস্টার্ন মেরিন যাত্রার পর দেশী-বিদেশী ১৫০টির অধিক জাহাজ নির্মাণ ও ৩৩টি জাহাজ রফতানি করেছে। বৈশ্বিক সংকট ও কভিডকালে অর্থনৈতিক সংকটে ওয়েস্টার্ন মেরিনও চলতি মূলধন সংকটে রয়েছে। আমরা এরই মধ্যে সরকারের কাছে প্রণোদনা ঋণের জন্য আবেদন করেছি। জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বিশেষ নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে খাতটি নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে।
অর্থ সংকটে ব্যবসায়িক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়লেও কয়েক মাস ধরে পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বমুখী ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের শেয়ারদর। এ বছরের ২৯ এপ্রিল ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৮ টাকা ৬০ পয়সা। সেখান থেকে এর দর বেড়ে সর্বশেষ গতকাল ১৬ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। নতুন জাহাজ নির্মাণ ও বিদেশী কার্যাদেশ পাওয়ার গুজবে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
ওয়েস্টার্ন মেরিন কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, সম্প্রতি সরকার শিপ বিল্ডিং খাতের উন্নয়নে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। ‘বাংলাদেশ শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট পলিসি’ নীতিমালা এখন বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। মূলত শিপ বিল্ডিং খাত ভারী শিল্প ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হওয়ায় দেশের অন্যান্য খাতের মতো ঋণ প্রদান ও আদায় এ খাতে সম্ভব নয়। তাছাড়া কার্যক্রম শুরুর পর দেশী-বিদেশী বেশকিছু সার্টিফিকেট অর্জনের পর বিদেশী কার্যাদেশ আসতে শুরু করে। যার কারণে নতুন নীতিমালাটি বাস্তবায়নের পর স্বল্পসুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে জাহাজ নির্মাণ শিল্প নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছেন তারা।
প্রতিষ্ঠানটির এক পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় ৪০ একর জমির ওপর শিপইয়ার্ড নির্মাণ করলেও নিজস্ব জমি রয়েছে ২৮ একর। বাকি ১২ একর জমি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৩০ বছর মেয়াদি ইজারার নেয়া। কয়েক বছর ধরে ইজারার টাকা বকেয়া থাকায় ছাবের আহমেদ নামে এক ইজারাদাতা ওয়েস্টার্ন মেরিনের জায়গায় সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছেন। এছাড়া আরো একজন ইজারাদাতা ওয়েস্টার্ন মেরিনকে শিপইয়ার্ডের ইজারা নেয়া জমি ছেড়ে দিতে নোটিসও দিয়েছেন।
ব্র্যাক ব্যাংকের কাছ থেকে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ঋণ নেয়ার সময় ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। বর্তমানে তিনি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডের ব্যবসায় পতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানিটি নিজেদের সক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে, যা পরবর্তী সময়ে তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে উচ্চসুদে নেয়া ঋণের কারণেও কোম্পানিটিকে ভুগতে হয়েছে। এর সঙ্গে কোম্পানি পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা ও তহবিলের অপব্যবহার তো ছিলই। সব মিলিয়েই কোম্পানিটিকে এ দূরবস্থায় পড়তে হয়েছে।