অবশেষে পরাজয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ

1987
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

সিরিজ হারার পর প্রথম জয়ের দেখা পেল অস্ট্রেলিয়া। লক্ষ্য বড় না হলেও ধুঁকতে ধুঁকতে তারা জিতল ৩ উইকেটে।

১০৫ রানের ছোট লক্ষ্য। এই রান তাড়া করতেও শুরুতে উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। ফলে আশা জাগে বাংলাদেশের। কিন্তু সাকিব আল হাসানের এক ওভার এলোমেলো করে দেয় সব। এক ওভারে ৫ ছক্কায় ৩০ রান দেন তিনি। ওই এক ওভারেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া পায় চলতি সফরে নিজেদের প্রথম জয়। লক্ষ্য বড় না হলেও ধুঁকতে ধুঁকতে তারা জিতল ৩ উইকেটে।

ড্যান ক্রিস্টিয়ানের ঝড়, মাঝে অস্ট্রেলিয়ার নাটকীয় ধস পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত সিরিজে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল অস্ট্রেলিয়া। টাইগাররা পেল প্রথম পরাজয়ের স্বাদ। চতুর্থ ম্যাচে এসে হোয়াইটওয়াশ এড়াল সফরকারীরা।

১০৫ রান তাড়ায় এক ওভারেই ৩০ নেন ড্যান ক্রিস্টিয়ান, তার পরও পরাজয়ের শঙ্কায় ছিল অস্ট্রেলিয়া। ৬৫ রানে তারা হারায় ৬ উইকেট। তবে অ্যাশটন অ্যাগারের সৌজন্যে শেষ পর্যন্ত শঙ্কা কাটাতে পারে তারা। জয়ের কাছে গিয়ে তিনি আউট হলেও দল জিতে যায় এক ওভার বাকি রেখে। বাংলাদেশের ১০৪ রানের পুঁজিতে ৪ ওভারে সাকিবের দেয়া ৫০ রানই শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করল পরাজয়।

সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশকে তিন উইকেটে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-১ ব্যবধান আনল ম্যাথু ওয়েডের দল।
শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেটে ১০৪ রান করে বাংলাদেশ। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন মোহাম্মদ নাঈম। জবাব দিতে নেমে ছয় বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া।

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়া। দলীয় ৩ রানের মাথায় হারায় অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে। এরপর হারিয়েছে আরেকটি উইকেট। কিন্তু সাকিব আল হাসানের এক ওভার পাল্টে দেয় দৃশ্যপট।

ইনিংসের চতুর্থ ওভারটি বিভেষিকাময় ছিল সাকিবের জন্য। সাকিবের ছিল সেটি দ্বিতীয় ওভার। প্রথম বলেই ফ্লিক করে লং অন দিয়ে ছক্কা হাঁকান ক্রিস্টিয়ান। পরের দুটি ছক্কা মারেন স্লগ করে মিড উইকেট দিয়ে। চতুর্থ বলটিতেও সজোরে মারেন ক্রিস্টিয়ান। কিন্তু টাইমিং ঠিকঠাক হয়নি। পরের দুই বলে আবার দুটি ছক্কা মারেন ক্রিস্টিয়ান। একটি লং অন দিয়ে অন্যটি মিড উইকেট দিয়ে। ওই এক ওভারে ৩০ রান পায় অস্ট্রেলিয়া।

মূলত ওই ওভারেই বাংলাদেশের আশা মিলিয়ে যায়। এরপর অবশ্য ভয়ংকর হওয়া ক্রিস্টিয়ানকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান মোস্তাফিজ। মোস্তাফিজের কাটারে বিভ্রান্ত হয়ে যান ক্রিস্টিয়ান। তবে ব্যাটে-বলে হয়নি। দ্বিতীয় বলে খানিকটা জায়গা বানিয়ে সজোরে ব্যাট চালান। বল যায় সোজা পয়েন্টে। সেখানে থাকা শামীম হোসেন ক্যাচ লুফে নেন। ১৫ বলয় ৩৯ করে ফেরেন তিনি।

ক্রিস্টিয়ান ফেরার পর রান আউটে কাটা পড়েন হেনরিকেস। সাকিবের বলে সোজা ড্রাইভ খেলেন মিচেল মার্শ। ক্রিজ থেকে বেরিয়ে আসেন হেনরিকেস। রান আউট করে ফেরাতে ভুল করেননি সাকিব।

এরপর অ্যালেক্স ক্যারিকে আউট করেন মুস্তাফিজ। দুর্দান্ত এক স্লোয়ার ডেলিভারিতে ক্যারিকে ফাঁদে ফেলেন তিনি। এরপর মেহেদী মিচেল মার্শকে আউট করলে লড়াইয়ে ফেরে বাংলাদেশ। কিন্তু লড়াই ফিরলেও অল্প রানের পুঁজি নিয়ে জেতা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের।

এদিন উইকেটের সুবিধা কাজে লাগাতে টস জিতেই ব্যাটিং নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু আগে ব্যাটিংয়ের সুবিধাটা কাজে লাগাতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। গত তিন ম্যাচে ধারাবাহিক ব্যর্থ হওয়া সৌম্য সরকার এই ম্যাচেও হতাশ করেছেন। তৃতীয় ওভারে জশ হেইজেলউডের রাউন্ড দ্য উইকেটে করা লেংথ বলটি ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে। সৌম্য সেখান থেকেই পুল করতে যান। কিন্তু তার পজিশনই ঠিক ছিল না। সৌম্যের ব্যাটে লেগে বল উঠে যায় ওপরে। মিড অফে সহজ ক্যাচ লুফে নিয়ে সৌম্যকে সাজঘরের পথ দেখান অ্যালেক্স কেয়ারি।

আগের তিন ম্যাচে ৪ রান করা সৌম্য এবার করলেন এক বাউন্ডারিতে ১১ বলে ৮ রান। পুরো সিরিজে আজই প্রথম বাউন্ডারির দেখা পেলেন এই ওপেনার। সৌম্যের বিদায়ে ২৪ রানে ওপেনিং জুটি।

সৌম্যের পর সাকিব আল হাসান নাঈমের সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু আগের দিনের সাকিবকে খুব একটা ছন্দে পাওয়া গেল না। ব্যাটিংয়ে ধুঁকতে দেখা যায়। ২৬ বল টিকে থাকলেও মাত্র ১৫ রান নিতে পেরেছেন তিনি। থিতু হয়ে জশ হেইজেলউডের বলেই আউট হন তিনি।
রাউন্ড দ্য উইকেটে হেইজেলউডের বল জায়গা বানিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন সাকিব। টাইমিং ঠিক হয়নি। বল চলে যায় কিপারের হাত। সাকিব ফেরার পর একে একে ব্যর্থতা দেখা মাহমুদউল্লাহ, নুরুল হাসান সোহান।

আগের ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করা অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আজ রানের খাতাই খুলতে পারেননি। মিচেল সোয়েপসনের ফুল লেংথ বল সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন মাহমুদউল্লাহ। বল টার্ন না করে সোজা গিয়ে লাগে মাহমুদউল্লাহর প্যাডে। রিভিউ নেননি অধিনায়ক। ফিরে যান সাজঘরে।

মাহমুদউল্লাহর পর সোহানকেও নিজের শিকার বানান সোয়েপসন। অসি তারকার গুগলি সোহান বুঝে ওঠার আগেই লেগে যায় প্যাডে। তিন রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।

সেখান থেকে বাঁচাতে পারলেন না নাঈমও। সোয়েপসনের বলেই কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে ফেরেন তিনি। ওপেনিংয়ে নামা নাঈম করেন ২৬ রান। ৩৬ বলে তার ইনিংসে ছিল দুটি বাউন্ডারি। সবার স্লো গতির ব্যাটিংয়ের মাঝে ১৭ বলে ২০ রান করে আউট হন আফিফ।

অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের হারিয়ে মন্থর উইকেটে বেশিদূর যেতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১০৪ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস।

বল হাতে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দারুণ করেছেন সোয়েপসন। মাত্র ১২ রান দিয়ে তিনটি উইকেট নিয়েছেন তিনি। ২৪ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়েছেন হেইজেলউড। তিন উইকেট নিয়েছেন অ্যান্ডু টাই। একটি নিয়েছেন অ্যাশটন অ্যাগার।

১০৪ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ
১০৪ রানেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। শুরুতেই সৌম্যকে হারিয়ে বাংলাদেশ যখন থিতু হবে হবে করছে। তখনই শুরু হয় আউটের মিছিল। একে একে আউট হলেন সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও নুরুল হাসান সোহান। মাঝে আফিফ হোসেন এসে আশা জাগালেও, বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি।

অ্যাশটন অ্যাগারের একটি ফুল টস পেয়ে ছক্কা মারার পর আফিফ হোসেন বিদায় নিলেন স্লগ সুইপে ছক্কা মারার চেষ্টায়। অফ স্টাম্পের বাইরের বলটি হাঁটু গেড়ে টেনে মিড উইকেট দিয়ে ওড়ানোর চেষ্টা করেন আফিফ। যথেষ্ট জোর পাননি মারে। ক্যাচ নেন মোইজেস হেনরিকেস।

সৌম্যর পর সাকিব এসে রান তুলতে পারেননি। নাঈম শেখের সঙ্গে জুটি বেঁধে ২৬ বলে ১৫ রান করে সাজঘরে ফিরেছেন হ্যাজেলউডের বলে ম্যাথু ওয়েডের হাতে ক্যাচ দিয়ে।

সাকিব আল হাসানের ফেরার পরের ওভারেই মিচেল সোয়েপশনের বলে রিয়াদ এলবিডব্লু হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। গত ম্যাচে রিয়াদের ৫১ রানের ইনিংসে ভর করেই অজিদের হারায় টাইগাররা। রিয়াদের বিদায়ের পরের বলেই সোহানকে শূন্য রানে ফিরিয়েছেন সোয়েপশন। চলতি সিরিজে গত তিন ম্যাচে মাত্র ৪ রান করেছিলেন সৌম্য সরকার। দলের এই ওপেনার আজ ৮ (১০) রানে বিদায় নিয়ে হতাশ করেছে। জশ হ্যাজেলউডের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে বৃত্তের ভেতরেই ক্যাচ দিয়েছেন অ্যালেক্স ক্যারির হাতে।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানা চার ম্যাচে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নেমেছে বাংলাদেশ। টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। অপরিবর্তিত একাদশ নিয়েই মাঠে নেমেছে স্বাগতিক দল। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়া একাদশে পরিবর্তন আছে দুটি।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন