চাকরির বাজার নিয়ে হতাশা, বয়স নেই ২ লাখ প্রত্যাশীর

1989
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

গেল বছর দেশে করোনা সংক্রমণের পর থেকে সংকুচিত চাকরির বাজার। দুই বছরেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স হারিয়েছেন প্রায় দুই লাখ চাকরি প্রত্যাশী। তাই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবি ভুক্তভোগীদের।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বয়স সমন্বয় করে নতুন চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। তবে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলেও চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চালু রাখলে এই সংকট সমাধান সম্ভব, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করার পর থেকেই সরকারি চাকরির খোঁজে পড়াশোনা করছেন আহমেদ রুবেল। ২০২০ সাল ছিল তার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের শেষ বছর। কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে সে বছর মার্চ থেকে কোনো চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তার দীর্ঘদিনের আশায় এখন গুড়েবালি।

তার মতে, সেশনজট এবং করোনার কথা বিবেচনা করে সরকারি চাকরির বয়সসীমা অবশ্যই বাড়াতে হবে।

শুধু রুবেলই নন, গত বছর দেশে করোনা সংক্রমণের সময় যাদের বয়স ২৮ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশি ছিল তাদের সবাই ইতোমধ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স হারিয়েছেন।

দেশের শ্রমবাজারে বছরে প্রায় ১০ লাখের মতো নতুন শ্রমশক্তি প্রবেশ করে। দেশে চাকরির যে বাজার, তাতে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ৪৭ শতাংশ গ্র্যাজুয়েটের চাকরি পাওয়ার সুযোগ হয় না বলে জানিয়েছেন শ্রমবাজার বিশেষজ্ঞরা।

দেশে চাকরিতে নিয়োগের সবচেয়ে বড় অনলাইন প্লাটফর্ম বিডিজবসের তথ্য বলছে, করোনা সংক্রমণের পর গত বছর মার্চে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি কমেছিল ৮০ শতাংশ। চলতি মার্চ থেকে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় চাকরির বাজার কমেছে ৪০ শতাংশ। আর এই দুই বছরেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স হারিয়েছেন প্রায় দুই লাখ চাকরি প্রত্যাশী। তাই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানোর দাবি অনেক চাকরি প্রত্যাশীদের।

তাদের দাবি, অন্তত করোনা পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে চাকরির বয়স ৩৫ করার।

সর্বশেষ ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ছয় কোটি ৩৫ লাখ। আর তাদের মধ্যে কাজ করে ছয় কোটি আট লাখ নারী-পুরুষ। কর্মক্ষম থেকে কর্মরত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাদ দিলে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। করোনাকালে যে লাখ লাখ মানুষ কাজ হারিয়ে নতুন করে বেকার হয়েছে তাতে বেকারত্বের হিসাব ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চালু রাখলে চাকরি প্রত্যাশীদের করোনাকালীন ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব বলে মত শিক্ষাবিদদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক মনে করেন, বর্তমানে চাকরির পরীক্ষা নিতে না পারলেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা যায়। এতে যাদের বয়স আছে তারা আবেদন করে রাখতে পারবে। পরবর্তীতে দুই থেকে তিন বছর পরও যদি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ হবে তখন বর্তমানের চাকরি প্রত্যাশীরা ডাক পাবেন এবং পরীক্ষা দিতে পারবেন।

তবে করোনার কারণে যেসব চাকরি প্রত্যাশী বয়স হারিয়েছেন তাদের কথা বিবেচনায় রেখে বয়স সমন্বয় করেই নতুন চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারি যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার কথা ছিল, তা যদি প্রকাশ করা না হয় তাহলে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ৩০ বছর ধরেই পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে সে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। যেন কেউ বঞ্চিত না হয়। সবাই বয়সের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে।’

এছাড়া দেশের মানুষের গড় আয়ু এবং অবসরগ্রহনের বয়সসীমা বাড়ার কারণে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোটা যৌক্তিক, বলছেন শিক্ষাবিদরা।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন