নিজস্ব প্রতিবেদক:
মহামারী নিয়ন্ত্রণে চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে পোশাক শিল্পসহ সব ধরনের কারখানা খুলে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন শিল্পমালিকরা। এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির নেতারা বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে এক বৈঠকে এ অনুরোধ জানান। তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর শঙ্কা, সাপ্লাই চেইন ভেঙে পড়া, বন্দরে জট, সার্বিক অর্থনীতিসহ সবকিছু বিবেচনা নিয়েই তারা এ অনুরোধ জানাতে বাধ্য হয়েছেন। তবে মন্ত্রিপরিষদ বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি এবিষয়ে কথা বলে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তটা জানাবেন। বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান, বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শীদি ও সিদ্দিকুর রহমানসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকলে কী সমস্যা সেগুলো আমরা বলেছি। কারণ সাপ্লাই চেইনটা ভেঙে যাচ্ছে। পোর্টে জটের কথা আপনার সবাই জানেন। আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর শঙ্কা আছে আমাদের। সর্বশেষ আমাদের স্থানীয় কারখানাগুলোতেও সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হচ্ছে। খাদ্য, চামড়া, ওষুধ শিল্পকে খুলে দেওয়া হলেও সেখানেও ‘সাপ্লাই চেইনের সঙ্কট’ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি বলেন, ফুড ইন্ডাস্ট্রির র্যাপিংয়ের দরকার। কার্টনের দরকার। এমন অবস্থায় ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ রাখা যায় না।
বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সাংবাদিকদের বলেন, যে লকডাউনটা আছে, এটা থেকে যেন সমস্ত ধরনের শিল্পকে বাদ দিয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়, এটাই অনুরোধ করতে এসেছিলাম। সরকারের তরফ থেকে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে এই অনুরোধটা আমরা করেছি। তিনি বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। কথা বলে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তটা দেবেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি, সংক্রমণ, মৃত্যু সবকিছু মাথায় নিয়ে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকার এটা বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করি। পোশাক শিল্প শুধু না, সমস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে আমরা এসেছি। সমস্ত শিল্পের সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত। সে কারণে আমরা এটা আবারও অনুরোধ করেছি। যেন এটাকে লকডাউনের বাইরে রাখা হয়, যেন বিষয়টা বিবেচনা করা হয়।
কোনা নির্ধারিত দিন থেকে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কোনো নির্দিষ্ট দিন নয়, বলেছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। যেহেতু ২৩ তারিখ থেকে লকডাউনে সব কিছু বন্ধ আছে, ঈদের আগে অলমোস্ট ১৮-১৯ তারিখ থেকে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে, সবকিছু অনেকদিন বন্ধ থাকার কারণে সবকিছুরই সাপ্লাই চেইনে একটা শর্টেজ হয়। আমাদের এক্সপোর্ট যেটা আছে, তার সঙ্গে সঙ্গে লোকাল এবং পোর্টেও অনেক ইমপোর্টেড মাল আসে। জাহাজগুলো আনলোড করা, মালগুলো পোর্টে রাখার জায়গা থাকছে না। সে কারণে যদি ফ্যাক্টরিগুলো, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো না খোলে, পোর্ট থেকে কন্টেইনারে মাল রিলিজ না করলে একটা জটিলতার দিকে চলে যাচ্ছে।
শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার জন্য কারখানা খুলে দেওয়া দরকার মন্তব্য করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শ্রমিকরা গ্রামে থাকলে সেখানে ডাক্তার বা ওষুধের দোকান বা হাসপাতাল নেই। কিন্তু যে ফ্যাক্টরিগুলো আছে, যার আশেপাশে তারা থাকে, সেখানে যদি থাকে, তাহলে শ্রমিকদের আমরা নিরাপত্তা দিতে পারি।
বৈঠকের পর এ বিষয়ে কোনো ব্রিফ করেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তবে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রিপরিষদ সচিব বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে বলেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রন সংক্রান্ত কোর কমিটি গত মঙ্গলবার একটি বৈঠক করেছে। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রিফ করে জানিয়েছেন যে ৫ আগস্টের আগে শিল্প কারখানা খোলার অনুরোধ রাখা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্যই বৈঠকে পুনর্ব্যক্ত করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
## সবুজ/শব্দ– ৫৭৫