সংসদ প্রতিবেদক
বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দলটি গণতন্ত্রের কথা বলে। অথচ এর জন্ম সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের পকেট থেকে। তিনি একাধারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সেনাপতি ছিলেন। এটা একমাত্র খুনি আইয়ুব খান করেছিলেন। ‘বিএনপি’ শব্দের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হেসে ফেলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বিএনপি মানে বাংলাদেশ না, পাকিস্তান, হ্যাঁ। এই তো তাদের দল।’ শনিবার একাদশ জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষনে তিনি একথা বলেন।
বিদ্যুৎ নিয়ে বিএনপি দলীয় এমপির বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন দেশের ৯৯ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে এটা বিএনপির সহ্য হচ্ছে না। তাদের সময় দুর্নীতির দায়ে বিশ্বব্যাংক টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। বিদ্যুৎ চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সার চাইলে কৃষককে হত্যা করা হয়। রোজার মাসে বেতন চাওয়ায় শ্রমিকদের গুলি করে মারা হয়।
করোনা সংক্রমণের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কথা বলার জন্য বলা যেতে পারে। কিন্তু এটাও একটু চিন্তা করতে হবে, লেখাপড়া শিখবে, এ জন্য জেনেশুনে ছেলেমেয়েদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব কি না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে স্কুল কলেজে যায়, তারাই কিন্তু তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চান না। তবে যাদের ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া করে না, ইদানিং তারাই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। পড়ানোর মতো ছেলে-মেয়ে যাদের নেই, তারাই বেশি কথা বলে।
এর আগে সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের তার বক্তব্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার দাবি জানান। পরে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার এ জন্য একটু ক্ষতি হচ্ছে। টিকা দেওয়ার পরে আমরা সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেব। এর আগে আমরা যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিলাম, তখনই সারা বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারি এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ল, তার ধাক্কা এসে পড়ল আমাদের মধ্যে। এখন তো শিশুদেরও করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। লেখাপড়া শিখবে, কিন্তু এটার জন্য জেনেশুনে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেব কি না, তা বিরোধী দলীয় উপনেতা একটু বিবেচনা করবেন। বলার জন্য বলতে পারেন, কিন্তু এটাও একটু চিন্তা করুন, ছেলেমেয়েদের মৃত্যুর মুখে দেবেন কি না।
হাসপাতালে অক্সিজেনের যেন সমস্যা না হয়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী অক্সিজেনের অভাবে মারা যাওয়ার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন। যান্ত্রিক কিছু ত্রুটি হলেও বিকল্প ব্যবস্থা রাখার কথা বলেন তিনি। এ সময় সংসদ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি হাসপাতালের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। একেক সময় একটা জায়গায় হঠাৎ সমস্যা চলে আসে। আবার মাঝেমধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটি হয়। এর কারণে যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বা মৃত্যুবরণ করেছেন, আমি তাঁদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে এ রকম ত্রুটি যাতে না দেখা দেয় বা হলেও যাতে বিকল্প থাকে, ইনশা আল্লাহ সে ব্যবস্থা আমরা করব। করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, লকডাউন ঘোষণা করছি। দেশবাসীকে বলব, আপনারা অন্ততপক্ষে নির্দেশনাগুলো মেনে নিজেকে সুরক্ষিত রাখেন। অন্যকেও সুরক্ষিত রাখেন। এটার একটাই উপায় মাস্ক পরা, হাত পরিষ্কার করা, আর কোনোমতেই যেন সংক্রামিত না হয়, সেজন্য দূরত্ব বজায় রাখা।
টিকার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, টিকা আসতে শুরু করেছে। কোনো অসুবিধা হবে না। সারা বাংলাদেশে টিকা দিয়ে সবাই যেন সুরক্ষিত থাকে, সে ব্যবস্থা আমরা করব। করোনা পরীক্ষাও বিনা মূল্যে করে দিয়েছি। টিকার ক্ষেত্রে প্রবাসী কর্মীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বাজেটে টিকার জন্য পর্যাপ্ত টাকা রাখা হয়েছে। ৩২ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা আমরা বরাদ্দ রেখেছি। এর বাইরেও ১০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে রিজার্ভ। করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে জনগণের বাড়ি যাওয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণকে গত ঈদে অনুরোধ করলাম, জায়গা ছেড়ে কোথাও যাবেন না। কিন্তু কেউ শোনেনি। করোনা ছড়িয়ে পড়ল। তখন সবাই শুনলে এমন ছড়াত না; এটাই বাস্তবতা। তিনি আরও বলেন, আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি পাশে দাঁড়াতে। দলের পক্ষ থেকেও মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। এমন কোনো খাত নেই, যেখানে আমরা সহযোগিতা করিনি।
লকডাউনে মানুষের পাশে সরকার আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে বাজেট দিয়েছি, সেটাতে যেমন জীবন-জীবিকা প্রাধান্য দিয়েছি। কেউ না খেয়ে যাতে কষ্ট না পায়, তার জন্য দরকার হলে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেব। করোনার টিকার আর সমস্যা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা এসেছে। টিকার জন্য চীন, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া সব জায়গায় যোগাযোগ করা হচ্ছে। টিকার জন্য পর্যাপ্ত টাকা রাখা হয়েছে বাজেটে। কোনো সমস্যা হবে না। তিনি আরও বলেন, অনেক দাম দিয়ে টিকা কেনা হচ্ছে। কিন্তু মানুষকে এই টিকা বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। সীমান্ত এলাকায় যেখানে সংক্রমণ বেড়ে গেছে, সেখানে বিনা মূল্যে করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে। বিদেশগামীদের টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।
কোরবানির ঈদের আগে রোজার ঈদের কথা স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সমস্যা হচ্ছে যে জনগণকে গত ইদুল ফিতরে বারবার অনুরোধ করলাম যে আপনারা আপনাদের জায়গা ছেড়ে যাবেন না। কিন্তু অনেকেই তো সেই কথা শোনেনি। সকলেই ছুটে চলে গেছে। আর তার ফলাফলটা কী হল? যারা বাইরে ছিল, পুরো বর্ডার এলাকায়, বিভিন্ন জেলায় এই করোনাটা ছড়িয়ে পড়ল। সবাই তখন যদি আমার কথাটা শুনত, তাহলে আজকে এমনভাবে করোনাটা ছড়িয়ে পড়ত না। মানুষের বাড়ি যেতে চাওয়ার প্রবণতাকে সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে সংক্রমণ এড়াতে মহামারীকালে সবাইকে এক্ষেত্রে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।