কারাবন্দী থাকা অবস্থায় হাসপাতালে থেকে ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন জুম মিটিং করার ঘটনায় ১৩ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা এবং ৪ কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শুক্রবার (২ জুলাই) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চার জনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে তারা হলেন, প্রধান কারারক্ষী মীর বদিউজ্জামান (নম্বর-১১৪৭৪), প্রধান কারারক্ষী ইউনুস আলী মোল্লা ( নম্বর- ১১৫৫১), প্রধান কারারক্ষী আব্দুস সালাম (নম্বর-১১৪৪৮), প্রধান কারারক্ষী আনোয়ার হোসেন ( নম্বর- ১১৫২৪)।
১৩ কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে তারা হলেন, সহ-প্রধান কারারক্ষী জসিম উদ্দিন ( নম্বর- ১২০১৮), সহ-প্রধান কারারক্ষী সাইদুল হক খান (নম্বর-১২০০১), সহ-প্রধান কারারক্ষী বিল্লাল হোসেন (নম্বর-১১৬১৬-), সহ-প্রধান কারারক্ষী ইব্রাহিম খলিল (নম্বর-১১৯৭৫), সহ-প্রধান কারারক্ষী বরকত উল্লাহ (নম্বর-১১৯৮৭), সহ-প্রধান কারারক্ষী এনামুল হক (নম্বর-১২১২১), সহ-প্রধান কারারক্ষী সরোয়ার হোসেন (নম্বর-১১৬৩২), কারারক্ষী মোজাম্মেল হক (নম্বর-১২৫৩৬), কারারক্ষী জাহিদুল ইসলাম (নম্বর-১৪৯৭৪), কারারক্ষী আমির হোসেন (নম্বর-২২১৫৯), কারারক্ষী কামরুল ইসলাম (নম্বর-১২৩৮২), কারারক্ষী শাকিল মিয়া (নম্বর-১৫০৩৫), নবীন কারারক্ষী- আব্দুল আলীম।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় কারা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে পরবর্তী ৭ কার্যদিবসে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ডিআইজি-প্রিজন্স তৌহিদুল ইসলামকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন মুন্সিগঞ্জের জেল সুপার নুরুন্নবী ভুইয়া এবং নারায়ণগঞ্জের জেলার শাহ রফিকুল ইসলাম।
এর আগে, গত দুই মাস ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন আছেন ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রফিকুল আমিন। হাসপাতালে থাকার কারণ হিসেবে ‘ডায়াবেটিসের সমস্যা’ উল্লেখ করেছেন তিনি। রফিকুল আমিন কারাবিধি ভেঙে জুম মিটিং করেন এমন তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এরপর পরই বিষয়টি আলোচনায় আসে। আইজি প্রিজন্স এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘কবে কিভাবে তিনি এমন কাজ করলেন সেটি আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি। তদন্ত কমিটি তদন্ত করে নিশ্চিত করবে।’ কারা সূত্র জানায়, তদন্তে প্রমাণিত হলে কারারক্ষিদের শাস্তির সঙ্গে সঙ্গে রফিকুল আমিনের বিরুদ্ধে কারাবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়, রফিকুল আমিন কেবল কাগজে-কলমে কিংবা চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে ‘অসুস্থ’। হাসপাতালে থেকে দিব্যি ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন তিনি। মোবাইল-ইন্টারনেট ব্যবহার করে জুম অ্যাপে নিয়মিত মিটিংও করছেন। দুটি মিটিংয়ের একটি করেছেন এ বছরের মে মাসের এবং আরেকটি জুন মাসের। ভিডিওতে দেখা গেছে রফিকুল আমিন ডেসটিনির মতোই নতুন আরেকটি এমএলএম ব্যবসার বিষয়ে আলোচনা করছেন। ইতোমধ্যে সেই ব্যবসা শুরুও করেছেন তিনি। ব্যবসার জন্য শিগগিরই এক হাজার ৩০০ মার্কেটিং এজেন্ট নিয়োগের কথা বলেছেন।
জুম মিটিংয়ের রেকর্ড করা ভিডিওতে রফিকুল আমিনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি সেখানে ‘মিস্টার এ’ নামে রেজিস্ট্রি করেছেন। তার প্রোফাইল ছবিতে ইংরেজি বর্ণের বড় হাতের ‘জ (আর)’ লেখা। ব্যবসার বিষয়ে আলাপকালে তার নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে তাকে কথা বলতে শোনা গেছে। এছাড়া নতুন ব্যবসায় ধীরগতির বিষয়ে মিটিংয়ে রফিকুল আমিন বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে (কারাগারে) যাওয়ার কারণে সেই কাজটা পিছিয়ে গেছে।’ এক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জেলে থেকে কোরআন-হাদিসের অনেক জ্ঞান নিয়েছি।’ রফিকুল আমিন কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। তবে, ডায়াবেটিসের সমস্যার কথা বলে এপ্রিলে তিনি বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন।