দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে হেনস্তা করার নতুন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওচিত্রে দেখা যাচ্ছে, রোজিনার মোবাইল কেড়ে নেওয়া থেকে শুরু করে নানাভাবে তাকে নাজেহাল করার চিত্র। রোজিনা বারবার নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও তাকে দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে।
২ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, সাংবাদিক রোজিনার মোবাইল চেক করছেন কয়েকজন। সে সময় রোজিনা বারবার বলছেন এগুলো আজকের না। পাশ থেকে এক পুলিশ সদস্য বলছেন, ‘এগুলো আজকের স্যার আমি নিজ চোখে দেখছি। আমার চোখ কখনো মিথ্যা কথা বলে না। সে দৌঁড়াইয়া গেছে এখান থাইক্কা। কত বড় খারাপ। সে মনে করছে মানধাত্তার আমলের পুলিশ আইছে…বুকে হাত দিছে, বুকে হাত দিছে, না? ফাজিল মহিলা।’
ভিডিওতে রোজিনাকে করিডোর থেকে রুমে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। একটি রুমে রোজিনার মোবাইল চেক করা হচ্ছিল। সে সময় তিনি বারবার তার মোবাইল ফেরত চাইছিলেন। রোজিনা বলছিলেন, ‘হারাম আজকে আমি কিচ্ছু করিনাই। এগুলা আগের।’ ওই রুমে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম। এ সময় ওই পুলিশ সদস্যকে বলতে শোনা যাচ্ছিল, ‘স্যার আপনি যা বলবেন তাই করবো। যাইতে পারবে না এই মহিলা।’
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, সাংবাদিক রোজিনা দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে করিডোর হয়ে অন্য রুমে প্রবেশ করলে সেখানে তাকে বসতে বলা হয়। কিন্তু তিনি দুইহাতে মাথা চেপে ধরে ওয়াশরুমে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম ওয়াশরুমের দরজা লাগাতে দিচ্ছিলেন না। বারবার নক করতে থাকেন তিনি।
ঘটনাটি ঘটে গত ১৭ মে। সেদিন বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে ফাইল থেকে নথি সরানোর অভিযোগে তাকে ওই রুমে আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তারা দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কিছুই জানাননি। পরে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত সাংবাদিকরা সচিবালয়ের বাইরে জড়ো হয়ে রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে পুলিশ স্বাস্থ্য সচিবের পিএসের রুম থেকে থেকে বের করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এরপর মধ্য রাতে তার বিরুদ্ধে চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা করা হয়। আদালত শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।
‘অফিসিয়াল সিক্রেটস আইনে’ করা মামলায় রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম বাকি বিল্লাহর ভার্চ্যুয়াল আদালত শর্ত সাপেক্ষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। একইসঙ্গে তাকে তার পাসপোর্ট জমা দিতেও নির্দেশ দেন আদালত।