প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মামলার তদন্ত যথাযথভাবে করা হচ্ছে হবে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
শনিবার (২২ মে) সকালে রোজিনা ইসলামের মামলার তদন্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত শেষ করতে কতদিন লাগবে তা এখনই সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তদন্তের ওপর নির্ভর করছে কতদিন লাগবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মামলাটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দরভাবে তদন্ত করছি। আমাদের ওপর আস্থা রাখুন, আমরা সঠিকভাবে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেব।’
এদিকে, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার জব্দ করা মোবাইল ফোন দুটি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোরও প্রক্রিয়া শুরু করেছে তদন্ত সংস্থা।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গত সোমবার (১৭ মে) সচিবালয়ে রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে হেনস্তা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। রাতে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশে হস্তান্তর করে নথি চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন পুলিশ তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করলে বিচারক রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত বৃহস্পতিবার তার জামিন আবেদনের শুনানি হলেও আদালত আগামীকাল রোববার এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য রেখেছেন। রোজিনা এখন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। শুরুর দিকে মামলাটি শাহবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করলেও বর্তমানে ডিবির রমনা বিভাগ তদন্ত করছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানীর দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের খালি কক্ষে ঢুকে দাপতরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকান এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন। ওই সময়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য বিষয়টি দেখতে পেয়ে বাধা দেন। পরে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে তার কাছ থেকে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টেসের ছবি সংবলিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, এসব কাগজপত্র গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত আছে, যা পরে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদর্শন করা হবে। তবে পুলিশের তৈরি করা জব্দ তালিকায় বলা হয়, আলামত হিসেবে জেনেভার বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের অ্যাম্বাসেডরের পাঠানো দুই পাতার ডিও লেটার, কভিড-১৯ মোকাবিলায় ব্যবহৃত চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের লক্ষ্যে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর জন্য সিএমএসডির পরিচালকের পাঠানো ৫৬ পাতা, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য দুই পাতার সারসংক্ষেপ, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শ কমিটি অনুমোদন সংক্রান্ত অনুমোদিত দুই পাতার সারসংক্ষেপ, একটি আইফোনসহ দুটি মোবাইল ফোনসেট ও দুটি পিআইডি কার্ড জব্দ করা হয়। জব্দ তালিকায় আরও বলা হয়, অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমের উপস্থাপন মতে উপরোক্ত ডকুমেন্টস ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হলো।
এদিকে, দাবি করা কাগজপত্র গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মামলার এজাহারে নিজেদের কাছে রেখে দেয়ার কথা বলা হলেও জব্দ তালিকায় তা কীভাবে এলো, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া জব্দ তালিকা অনুযায়ী তা রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করেনি।