যুদ্ধবিরতির আন্তর্জাতিক আহ্বান কানে তুলছেন না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন তিনি। আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলা অব্যাহত আছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ২১৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ১০০ জন নারী ও শিশু।
ইসরায়েলি হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে গাজা থেকে রকেট ছোড়া হচ্ছে। ইসরায়েলের ভাষ্য, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত গাজা থেকে প্রায় ৩ হাজার ৩০০টি রকেট ছুড়েছে হামাস। চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের পক্ষে ১২ জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে দুটি শিশু।
গতকাল পশ্চিম তীরে রামাল্লার কাছে বিক্ষোভকালে ইসরায়েলি পুলিশের হাতে তিন ফিলিস্তিনি নিহত হন। আহত হয়েছেন অনেকে। অন্যদিকে, গতকাল হামাসের ছোড়া রকেটে ইসরায়েলে দুই বিদেশি কর্মী নিহত হন। দুই পক্ষের সংঘাত বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা চললেও তা এখন পর্যন্ত কোনো ফল আনতে পারেনি।
গত সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে আলাপের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। কিন্তু তাঁর এ আহ্বান সত্ত্বেও ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত আছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত বন্ধে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁও উদ্যোগী হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির আহ্বানসংবলিত একটি খসড়া প্রস্তাব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জমা দিয়েছে ফ্রান্স। মিসর ও জর্ডানের সঙ্গে সমন্বয় করে ফ্রান্স এই উদ্যোগ নিয়েছে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সংঘাত থামাতে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মধ্যে সাধারণ পরিষদের এই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানা যায়। এর আগে এ ইস্যুতে গত রোববার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তির কারণে কেবল সংঘাত থামানোর আহ্বান জানানোর মাধ্যমে বৈঠকটি শেষ হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরায়েলিদের জন্য শান্তি পুনরুদ্ধার করতে যত দিন লাগে, তত দিন তাঁদের অভিযান চলবে। নেতানিয়াহুর ভাষ্য, গাজায় ইসরায়েলের নয় দিনের বোমা হামলায় হামাসের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তাতে তাঁরা অনেক বছর পিছিয়ে গেছেন।
ইসরায়েলের দাবি, গাজায় তাদের হামলায় কমপক্ষে ১৫০ জন ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। অবশ্য ইসরায়েলি হামলায় সংগঠনের সদস্যদের প্রাণহানির বিষয়ে হামাস কোনো তথ্য দেয়নি।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের চলমান সংঘাতের সূত্রপাত মূলত গত ১৩ এপ্রিল। পবিত্র রমজান মাসের প্রথম রাতে জেরুজালেমে দামেস্ক গেট বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় সেদিন পূর্ব জেরুজালেমে ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এ উত্তেজনা চরমে পৌঁছায় পূর্ব জেরুজালেমের শেখ জারাহ এলাকায় কয়েকটি ফিলিস্তিন পরিবারকে উৎখাতের মাধ্যমে।
২ মে শেখ জারাহ এলাকায় ইসরায়েলি পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের কয়েক দফায় সংঘর্ষ হয়। উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ জারাহ এলাকায় ফিলিস্তিনি পরিবারগুলোকে উৎখাতের বিষয়ে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট ৯ মে শুনানি পিছিয়ে দেন। তবে এতে উত্তেজনা থামেনি। ১০ মে পবিত্র আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এরপর হামাস রকেট হামলা চালালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন থেকে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ সংঘাত এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
এবারের এই সহিংসতাকে বলা হচ্ছে ২০১৪ সালের সংঘাতের পর সবচেয়ে বড় সংঘাত। ২০১৪ সালের ওই সংঘাতে ২ হাজার ২৫১ ফিলিস্তিনি নিহত হন। ইসরায়েলের পক্ষে প্রাণহানি ছিল ৭৪, যাঁদের অধিকাংশই সেনাসদস্য।