চেয়ারম্যান বাচ্চুর তান্ডব: পুকুরেই হয়েছেন কোটিপতি

1879
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

রাজশাহী প্রতিবেদক : রাজশাহীর পুঠিয়ার উপজেলার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদকে হত্যার হুমকির অডিও টেপা রেকর্ডসহ থানায় লিখিত অভিযোগকে কেন্দ্রকরে এলাকায় চাঞ্চল্যর সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসন, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও জন সাধারণের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পুঠিয়া থানা পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তা কথোপকথনের রেকর্ডের ক্লিপ অডিও আমলে নিয়ে বিশ্লেষন করছেন। যা সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে।
স্থানীয় সতেচন মহল ও একাধিক পুঠিয়ার বাসিন্দা চেয়ারম্যান বাচ্চুকে গ্রফতারের দাবি জানিয়ে সকল আইন রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, বিষয়টি এখনি দেখবার সময়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ দুর্নীতিবাজদের আওয়ামী লীগ দলে জায়গা নেই, তাদের বিচার শুরু হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন অর্কামন্ড মেধাহীন হুমকির ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি সঠিক হলে আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান তারা। সরকারি কর্মকর্তাকে খুন, গুম, হুমকি ও পেশার কাজে বাধা প্রদানের বিষয়টি মারাক্তক অপরাধ, বিচারের মুখোমুখী হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন।

সম্প্রতি উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম হিরা বাচ্চুর বিরুদ্ধে চাঁন্দাবাজি, নারী কেলেঙ্কারী হুমকির পাহাড়সম অভিযোগ রয়েছে। শুধু পুকুর কেটে হয়েছে কোটিপতি। তার বিরুদ্ধে প্রথম কেউ প্রকাশ্যে এসে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করলেন। কারণ মুখ খুললেই নেমে আসে ডাকালী বাচ্চুর খড়গ। বাচ্চুর হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া ভুক্তভোগী পালোপাড়ার লিটন অভিযোগ করে বলেন, অন্যায়ভাবে পুঠিয়াতে সর্ব প্রথম চেয়ারম্যান বাচ্চু আমাকে মারধর করে শারিরিকভাবে জখম করে। পরে গুম ও হত্যার হুমকি দিয়ে ঘটনাটি গোপন রাখতে বলে। তাই গরিব মানুষ হওয়ায় বিচার পাইনি। আবার রাসেল নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, চেয়ারম্যান বাচ্চু আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। আমি ভালো ছাত্র ছিলাম, তার জন্য পড়া লিখা করতে পারিনি। আমাকে শেষ করে ফেলেছে, তার হাতেও আমি একাধিকবার নির্যাতনের শিকার হয়েছি।

গত ৯ মে চেয়ারম্যান বাচ্চু তার নিজ মোবাইল থেকে এই হুমকি দেয় বলে অভিযোগ করেন আবুল কালাম। পুঠিয়া থানায় দায়ের করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত রোববার (৯ মে) দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে পুঠিয়ার উপজেলার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ তার নিজ কর্মস্থলে ছিলেন। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান তার নিজস্ব ০১৭১২-৬৪৮৪৩২ নম্বর মোবাইল থেকে ফোন করে আবুল কালাম আজাদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে আমাকে খুন, জখম করার হুমকি দেয়। এ সময় সে আমাকে আমার কর্মস্থলে চাকরি করতে দিবে না বলেও ভয়ভিতি দেখাচ্ছে এখন পর্যন্ত। তাই এ ঘটনায় ওইদিন তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। বর্তমানে মানসিকচাপে আছি।

স্থানীয় এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিন বছরে আঙ্গুল ফুলে হয়েছেন তালগাছ এই চেয়ারম্যান। মাত্র তিন বছরে চেয়ারম্যান হয়েই তিনি করেছেন বাড়ি, বেশ কয়েকটি জায়গায় কিনেছেন জমি ও পুকুর বণিজ্য। আর অসহায় মানুষদের জিম্মি করে অবৈধ উপায়ে কৃষি জমি খনন করে গড়ে তুলেছেন কয়েটি কোটি কোটি টাকার বড় বড় পুকুর। পুঠিয়া উপজেলার নন্দনগাছী তেলীপাড়া গ্রামের কান্তার বিল এলাকায়সহ আরো কয়েকটি গ্রামে তিনি কৃষি জমি দখল করে করেছেন কয়েটি পুকুর। আর এই কাজটি দেখছেন আশরাফুল নামের তার এক দোসর সহযোগী। অভিযোগ রয়েছে, অনেক কৃষক পুকুরের জন্য জমি না দিতে চাইলে তাকে নানা ভাবে ভয়ভীতি, হয়রানি ও নানা কৌশলে এলাকায় চলছে কৃষি জমি ধ্বংসের মহা উৎসব।

অভিযোগ রয়েছে, পুঠিয়া উপজেলার কয়েক বছরে প্রায় কয়েক হাজার পুকুর খনন হয়েছে। এই কাজে সহযোগিতা করেছেন গাঠু বাচ্চু নিজে অবৈধ লেনদেনর মধ্যেমে। একটি পুকুর করতে বিঘা প্রতি চেয়ারম্যানকে দিতে হয়েছে লক্ষ্যাধিক টাকা। কয়েক বছরে পুঠিয়ার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার পুকুর খনন করে তিনি কয়েক লাখ টাকা কামিয়েছেন। এখন এই উপজেলার কৃষি জমি গুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কৃষক ফসল করতে পারছে না।

জানা গেছে, প্রতিটি এলাকার গ্রাম্যে শালিশে তার ইচ্ছায় চলছে টর্চার সেল বিচার। যে পক্ষ তার লোকজনকে টাকা দিচ্ছে তাদের পক্ষেই যাচ্ছে বিচার। যারা অপরাধী তারা টাকা দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে, আর যারা ভুক্তভোগি তারা সঠিক বিচার পাচ্ছে না।

অভিযোগ রয়েছে, অনেক ধর্ষনের ও জমি জামা সালিশে তিনি মোটা অংঙ্কের টাকা নিয়ে ধর্ষকের পক্ষে কাজ করেছেন। নাম না প্রকাশের শর্তে পুঠিয়া রাজবাড়ী এলাকার এক কিশোরী জানান, গত দেড় বছর আগে আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এক শিক্ষক আমায় জোর পূর্বক ধর্ষন করে ভিডিও করে তিনি আমায় ভয় দেখিয়ে আরো বিভিন্ন সময়ে ধর্ষন করেছেন। এই বিষয়ে আমি থানায় মামলা করতে যাই। হটাৎ চেয়ারম্যনের গুন্ডা বাহিনী আমায় বাধা দেয়। পরে এলাকার মেম্বর চেয়ারম্যানের টর্চার সেলে নিয়ে বিষয়েটি মিমাংস করতে বলে। আমি তার কার্যালয়ে গেলে তিনি পাশের ঘরে নিয়ে গিয়ে পিস্তল দেখিয়ে এই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বলে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভোট ডাকাততির মাধ্যমে উপজেলার চেয়ারম্যান জিএম হিরা বাচ্চু এক সময় ছবি তোলার স্টুডিও বয় থেকে বিএনপির বড়পুত্রের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন জীবনের শুরুতে। ‘ছিলেন বিএনপি, হলেন চেয়ারম্যান ও করেছেন ছাত্রলীগ’ খোলস পাল্টিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি শুরু করেন, অল্প সময়ের মধ্যেই ছাত্র অবস্থায় ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এই সুযোগেই তিনি জড়িয়ে পড়েন নানান অপকর্মে। ধর্ষন, সরকারি জায়গা দখল, মার্কেট দখল, টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদা, হয়রানি, নির্যাতন ও ‘ডাকাইয়া গুন্ডা বাহিনী’ দিয়ে নানা অপকৌশলে মোটা অংঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। তার গুন্ডা বাহিনীর দিয়ে নানান ভাবে ফাসিয়ে থানায় মামলা, গুম, খুনের হুমকি ও নারী লোভী ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে, যা দেখার কেউ নেই। এ কারণে অনেকে তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলার সাহস পর্যন্ত পান না।

এদিকে পুঠিয়ার উপজেলার হিসাবরক্ষণ অফিসার আবুল কালাম আজাদের উপরে এই ঘটনা ঘটে গত (৯ মে) রোববার তিনি বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান যখন তাকে হুমকি দেয় তখন তার চেম্বারে ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও শিক্ষক প্রতিনিধিদের কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। কথোপকথনের অডিও রেকর্ড রয়েছে যা পুলিশকে দিয়েছি। এ ঘটনার পর সাথে সাথে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ডিভিশন কন্ট্রোলার অব একাউন্স, ঢাকা এডিশনাল সিজিও, অফিসার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সমাজসেবা কর্মকর্তাসহ পরিচিতদের জানিয়েছি।

জনপ্রতিনিধির এমন হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে দাবি করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের বিল পাসকে কেন্দ্র করে এর আগেও তিনি বিভিন্ন লোক মারফত আমাকে হুমকি দেয়। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান সরকারি এই কর্মকর্তা।
পুঠিয়া থানার ওসি মো. সোহরাওয়ার্দী বলেন, অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নানা অভিযোগ ও সম্প্রতি হত্যার হুমকি দেয়ার বিষয়টি নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম হিরা বাচ্চু মোবাইলে সোমবার দুপুরে বলেন, আমি কি খুনি যে তাকে হত্যার হুমকি দেব।

তিনি বলেন, ওই কর্মকর্তা একজন ঘুষখোর। শিক্ষকসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা কর্মচারিরাও তার কাছে জিম্ম। টাকা ছাড়া তিনি কোন কাজ করেন না। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা দিনের পর দিন হয়রানির স্বীকার হন। আবার ঘুষ দিলে কাজ হয়।

তিনি বলেন, বিল নেয়ার জন্য একজন ইউপি মেম্বার তার কাছে গিয়েছিল। তাকে বিল না দিয়ে তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। আমি তার কাছে মোবাইল করলে তিনি বলেন কে বলছেন। আপনারাই বলুন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম্বর থাকে না। এ জন্য তাকে গালাগালিজ করেছি বলে দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান আরো বলেন, হিসবারক্ষক কর্মকর্তা লেবাসধারী জামায়ােতের দোসর আবার ছিলেন শিবির ক্যার্ডার বলে অভিযোগ করছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করে সাংসদ ড. মুনসুর রহমান (পুঠিয়া-দুর্গাপুর ৫) বলেন, মেধাহীন হাইব্রিড আওয়ামী লীগের কারণে পুঠিয়ার রাজনীতির এমন করুণ অবস্থা। নেতা শূণ্য মাঠে সবাই নেতা হবার স্বপ্ন দেখে। আমি ভালো মনে করে বাচ্চুকে একটা জায়গা করে দিয়েছি। কিন্তু যেটা ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত। তার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগের বিষয়ে আগে কিছুই জানতাম না। তবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন