ভারতে ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৩২৯৯৪২, মৃত্যু ৩৮৭৬

1725
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

ভারতে রোববারের চেয়ে সোমবার করোনা রোগী শনাক্ত কমেছে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়।

ভারতে গতকাল ৩ লাখ ২৯ হাজার ৯৪২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এদিন দেশটিতে করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা যান ৩ হাজার ৮৭৬ জন।

ভারতে রোববার ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৬১ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনিবার শনাক্ত হয় ৪ লাখ ৩ হাজার ৭৩৮ জন। শুক্রবার শনাক্ত হয় ৪ লাখ ১ হাজার জন। বৃহস্পতিবার ৪ লাখ ১৪ হাজার ১৮৮ জন। এদিনই ভারতে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হয়। বুধবার ৪ লাখ ১২ হাজার ২৬২ জন শনাক্ত হয়। ৪ মে শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৮২ হাজার ৩১৫ জন। ৩ মে শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৫৭ হাজার ২২৯ জন। ২ মে শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি রোগী।

ভারতে রোববার করোনায় সংক্রমিত হয়ে ৩ হাজার ৭৫৪ জনের মৃত্যু হয়। শনিবার ৪ হাজার ৯২ জনের মৃত্যু হয়। শুক্রবার দেশটিতে রেকর্ড ৪ হাজার ১৮৭ জনের মৃত্যু হয়। এদিনই ভারতে প্রথম এক দিনে চার হাজারের বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার ৩ হাজার ৯১৫ জন মারা যান। বুধবার মারা যান ৩ হাজার ৯৮০ জন। ৪ মে ৩ হাজার ৭৮০ জন মারা যান। ৩ মে মারা যান ৩ হাজার ৪৪৯ জন। ২ মে মারা যান ৩ হাজার ৪৫৫ জন।

সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে করোনায় সংক্রমিত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৯ লাখ ৯২ হাজার ৫১৭। মোট প্রাণহানি ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯২ জনের।

গত মার্চের মাঝামাঝিতে ভারতে এক দিনে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ২০ হাজারের কাছাকাছি। তারপর দেশটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে সংক্রমণ। ৩ এপ্রিল ভারতে করোনায় সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটির মাইলফলক ছাড়ায়।

গত ৩০ এপ্রিল ভারতে প্রথম এক দিনে চার লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। তার আগে টানা নয় দিন ধরে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা ছিল তিন লাখের বেশি। তারও আগে ১৫ এপ্রিল থেকে দেশটিতে প্রতিদিন দুই লাখের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছিল।

টানা এক সপ্তাহ ধরে ভারতে দুই হাজারের বেশি মানুষ করোনায় মারা যাওয়ার পর গত ২৭ এপ্রিল থেকে দৈনিক মৃত্যু তিন হাজারের ওপরে ওঠে। তারপর দেশটিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গড়ে সাড়ে তিন হাজারের মতো মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছিলেন। ৭ ও ৮ মে দেশটিতে মৃত্যু চার হাজারের ওপরে ওঠে।

বিশ্বের কোনো দেশে এক দিনে সর্বোচ্চসংখ্যক করোনা রোগী শনাক্তের রেকর্ড এখন ভারতের দখলে। গত ২২ এপ্রিলের আগপর্যন্ত এই রেকর্ড যুক্তরাষ্ট্রের দখলে ছিল। যুক্তরাষ্ট্রে গত জানুয়ারিতে এক দিনে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।

ওয়ার্ল্ডোমিটারস শুরু থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারসের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পরেই রয়েছে ভারত। ভারতের পর রয়েছে ব্রাজিল। সম্প্রতি সংক্রমণের দিক দিয়ে ব্রাজিলকে টপকে দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে আসে ভারত।

বিবিসি বলছে, বিশ্বে বর্তমানে করোনার সংক্রমণের কেন্দ্র ভারত। ভারতে সংক্রমণের ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হচ্ছে। করোনার ভারতীয় ধরনকে ‘উদ্বেগজনক’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এ ছাড়া ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধির জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসব ও খেলাধুলার আয়োজনকে দায়ী করা হচ্ছে।

ভারতে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুর যে হিসাব সরকার দিচ্ছে, তার চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা বেশি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, সংক্রমিত অনেকে করোনা পরীক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ কারণে তাঁরা হিসাবের আওতায় আসছেন না। মৃত্যুর অনেক তথ্যও সরকারি হিসাবে যুক্ত হচ্ছে না।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা বিজ্ঞানীরা আগে জানালেও তাতে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। ভারতের করোনা সংকটের জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কাঠগড়ায় তুলেছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট। কোনোরকম রাখঢাক না রেখেই গত শনিবার এই জার্নালের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদির সরকারই দেশে কোভিড বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।

এনডিটিভির তালিকা অনুসারে, ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কর্ণাটক, কেরালা, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, অন্ধ্র প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানা।

করোনা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির মুখে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি টিকাদান কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ১ মে থেকে সব প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে (১৮ বছরের ঊর্ধ্বে) টিকাদানের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ভারত। তবে বিভিন্ন রাজ্যের কর্তৃপক্ষ টিকার সংকটের কথা জানাচ্ছে। তা ছাড়া টিকা গ্রহণের হারও কম।

ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে আরম্ভ হয়। ভারতে করোনার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় দেশটি তার সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। অক্সিজেন, জরুরি ওষুধ, হাসপাতালে শয্যার অভাবসহ নানা গুরুতর সংকটে দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম।

দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকায় চাপ সামাল দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না শয্যা। অনেকের অবস্থা গুরুতর হলেও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না। ঘরে রেখে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে রোগীদের মৃত্যুর খবর আসছে। বিদেশ ও দেশের অন্য এলাকা থেকে অক্সিজেন এনে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন