বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে গতকাল বুধবার আবেদন করা হয়েছে তার পরিবারের পক্ষ থেকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের তরফে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিষয়টি ইতিবাচকভাবেই দেখা হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে, অনুমতি মেলা মাত্র সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে লন্ডন নেওয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আজ বৃহস্পতিবার যেকোনো সময় চার্টার্ড বিমানে করে সিঙ্গাপুর হয়ে লন্ডন নেওয়া হবে। সঙ্গে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দল এবং পরিবারের সদস্যরা থাকবেন। তাকে হাসপাতাল থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স রেডি রাখা হয়েছে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, মানবিক কারণে সরকার খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেবে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সরকারের প্রতি এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়া সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। সোমবার সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার অবস্থা সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছি। তাকে বিদেশে নিতে পরিবারের ইচ্ছার কথা তুলে ধরেছি। পরিবার চায় খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে। খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘করোনার কোভিডোত্তর যেটাকে পোস্ট কোভিড জটিলতা হয়, সেই জটিলতায় কিন্তু মাঝে মাঝে টার্ণ নেয় বিভিন্ন দিকে। উনার (খালেদা জিয়া) যে বয়স, উনার যে বিভিন্ন রোগ আছে, এর আগে উনি যে প্রায় তিন বছর কারাগারে ছিলেন, এখনো তিনি অন্তরীনই আছেন। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে তার যেসমস্ত জটিলতা হয়েছে এবারে। সেজন্যই আমাদের দেশের প্রায় বেশির ভাগ মানুষের আকাঙ্খা আছে, ইচ্ছা আছে যে, তার চিকিৎসাটা উন্নত কোনো হাসপাতালে হওয়া উচিত। বাংলাদেশে উন্নত হাসপাতালেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। আমরা আশা করি, সরকার মানবিক কারণে তার বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।’
খালেদা জিয়ার চিকিসার অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ২৭ (এপ্রিল) তারিখ থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন। তাকে এখানে সর্বপ্রকার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং আমাদের চিকিৎসকরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তার চিকিৎসা করছেন। বাংলাদেশের মানুষ মৌলিক অধিকার, তারা তাদের নেতাকে সুস্থ দেখতে চায়।’
খালেদা জিয়ার আশুর রোগমুক্তি কামনায় আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুম্মা সারাদেশে মসজিদে দোয়া মাহফিল ও বিভিন্ন উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভার কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আগামীকাল শুক্রবার পবিত্র জামাতুল বিদার দিন আছে। সারাদেশে সমস্ত মসজিদ, বিভিন্ন প্রার্থনালয় যেগুলো আছে অন্যান্য ধর্মের সেগুলোতে আমাদের সমস্ত ইউনিটগুলো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তির জন্য দোয়া অনুষ্ঠান করবেন, প্রার্থনা সভা করবেন। আমি সকল ইউনিটের নেতা-কর্মীদের প্রতি অনুরোধ করছি, তারা যেন জনগণকে নিয়ে দেশনেত্রীর রোগমুক্তির জন্য দোয়া চাইবেন।’
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রামণ মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতা, অযোগ্যতা এবং ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে সরকারের ‘দুর্নীতি’র কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল।
অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারি অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস,বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল বাছিত আনজু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর উদযাপন উপকমিটির নেতা আতিকুর রহমান রুমন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল করোনা পরীক্ষার পর খালেদা জিয়ার সংক্রমণ ধরা পড়ে। শুরুতে তিনি গুলশানে তার ভাড়া বাসা ফিরোজায় ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিকীর অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত ২৭ এপ্রিল আবার সিটি স্ক্যানসহ প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেই রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালের সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।