ভারতের কাছ থেকে চুক্তি অনুযায়ী করোনার টিকার পরের চালান কবে আসবে, সেই নিশ্চয়তা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অনুরোধের জবাবে ভারত গতকাল শনিবার যে কূটনীতিক পত্র পাঠিয়েছে, তাতেও সেই অনিশ্চয়তা দূর হয়নি। বরং ভারত বাংলাদেশকে টিকা রপ্তানি আপাতত স্থগিত করারই ইঙ্গিত দিয়েছে।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে গতকাল সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকার বিষয়ে এসব কথা জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, সেরামের টিকার পরের চালান পেতে ভারতের কাছে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ
একটি চিঠি পাঠিয়েছিল। ভারত শনিবার ওই চিঠির জবাব দিয়েছে। এখনই যে তারা টিকা রপ্তানি করতে পারছে না, সেই ইঙ্গিত চিঠিতে রয়েছে।
মাশফি বিনতে শামস আরও জানান, টিকা রপ্তানি বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে বেশ কিছুদিন ধরে কথা হচ্ছে। তারা বারবার চুক্তি অনুযায়ী টিকা দেওয়ার কথা বলছে। তবে কবে সেটা দেবে, সেটা জানাচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশের জন্য লোকজনকে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দিতে হলে টিকা কবে আসবে, সেই সময়টাও জানা জরুরি।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি সই হয়েছিল। ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট ৩ কোটি ডোজের মধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৭০ লাখ টিকা দিয়েছে বাংলাদেশকে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও এরপর বাংলাদেশে আর কোনো টিকার চালান আসেনি। এ বিষয়ে এপ্রিলের ১৮ তারিখ বাংলাদেশে টিকা সরবরাহকারী বেক্সিমকো ফার্মা চিঠি দিয়ে সরকারকে বলেছে, সরকার যেন টিকার জন্য ভারত সরকারকে সর্বাত্মকভাবে অনুরোধ করে। এর পরদিন ১৯ এপ্রিল টিকা সরবরাহের অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ সরকার চিঠি দেয় ভারতকে।
গতকাল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনার টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটকে দেড় কোটি ডোজ টিকার জন্য অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়েছে। টিকা এসেছে ৭০ লাখ ডোজ। এখনো ৮০ লাখ ডোজ টিকা সেরাম ইনস্টিটিউট দেয়নি। সরকারের উচিত এই টিকার জন্য জোরালোভাবে বলা। তিনি বলেন, টাকা নেওয়ার পর টিকা আটকানোর কোনো অধিকার সেরামের নেই।
দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সেরাম ইনস্টিটিউটসহ সে দেশের অন্যান্য খ্যাতনামা টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো টিকার কাঁচামাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় ভারতের টিকার চাহিদা মেটানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। ফলে পাশ্চাত্যের দেশগুলো ওই নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে না নিলে ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে চুক্তি অনুযায়ী টিকা রপ্তানি করা প্রায় অসম্ভব।
গতকাল বিকেলে ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, টিকার বিষয়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি কূটনৈতিক পত্র পাঠিয়েছে। ওই চিঠিতে ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ভারত বলছে, বাংলাদেশের পণ্য হিসেবে এটির উৎপাদন হবে এবং ভারতের একাধিক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে কাজে লাগিয়ে এটা করা সম্ভব। এখন কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় ধাপের টিকার পরীক্ষার জন্য গত ডিসেম্বরে ভারত বায়োটেকের সঙ্গে আইসিডিডিআরবির চুক্তি অনুমোদন জরুরি বলে ভারত চিঠিতে উল্লেখ করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেরামের সঙ্গে যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে, তার আওতায় বাকি টিকা পাওয়ার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে বাংলাদেশ। ভারত বায়োটেকের সঙ্গে আইসিডিডিআরবির যে প্রসঙ্গটি চিঠিতে বলা হয়েছে, তা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।
বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, মূলত গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সেরাম ইনস্টিটিউটের বাকি টিকা পেতে ভারতের সঙ্গে ঢাকা ও দিল্লিতে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ চলছে। দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিবের মধ্যে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ভারত একদিকে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশকে টিকা দেওয়ার নিশ্চয়তা দিচ্ছে আবার অন্যদিকে নিজের দেশে টিকার বাড়তি চাহিদা আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে উৎপাদনের সংকটের বিষয়টিও বলছে। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, বাংলাদেশের জন্য মে মাসের মধ্যে টিকা পাওয়াটা জরুরি।