সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে অন্তত ২ সপ্তাহের লকডাউন চান বিশেষজ্ঞরা

1473
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ প্রতিদিনই ছাড়িয়ে যাচ্ছে আগের সব রেকর্ড। একই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এমন অবস্থায় দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর লকডাউন আরোপের সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন  জানিয়েছেন, ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য প্রযোজ্য হবে এই লকডাউন। এই সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া আর সবকিছু বন্ধ থাকবে। তবে দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্দেশনা বা নিষেধাজ্ঞা না বরং অন্ততপক্ষে দুই সপ্তাহের লকডাউন প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে এই দুই সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণার পাশাপাশি এটি কার্যকর করার জন্য মনিটরিং বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

শুক্রবার (৯ এপ্রিল) জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত এক সপ্তাহের জন্য প্রযোজ্য হবে এই লকডাউন। এই সময়ে জরুরি সেবা ছাড়া আর সবকিছু বন্ধ থাকবে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছি ২৯ মার্চ থেকে। ওই দিন ১৮ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আমরা বেশকিছু কড়াকড়ি আরোপ করেছিলাম। এরপর ৪ এপ্রিল আরও কিছু সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। আমাদের একটি লক্ষ্য ছিল জনমত তৈরি করা, জনসচেতনতা তৈরি করা। আমরা সেটি করেছি। মানুষ মোটামুটি প্রস্তুত হতে পেরেছে। এখন খুব দ্রুত আমাদের কঠোর লকডাউনে যেতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে আরও কয়েকদিন সময় আছে। এই কয়েকদিনের মধ্যে বাকি প্রস্তুতি নিয়ে নেওয়া হবে। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত কঠোর লকডাউন চলবে, যে সময়ে সবাই ঘরে থাকবে। কেবল জরুরি সেবা চলবে। কাউকে খুব জরুরি প্রয়োজনে বাইরে যেতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মানুষ বুঝতে পেরেছে— করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণ কমাতে হলে লকডাউন প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞসহ সংশ্লিষ্ট সবাইও এই পরামর্শই দিয়েছেন। সবার চিন্তাভাবনা-পরামর্শ বিবেচনায় নিয়েই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।’

এর মধ্যে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির বৈঠক থেকে দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে সরকার আপাতত এক সপ্তাহের জন্যই লকডাউন চালু রাখতে চায় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ বলেন, ‘আপাতত সাত দিনের জন্যই লকডাউন থাকবে। তারপর প্রয়োজনে আবার (লকডাউন বাড়ানোর) সিদ্ধান্ত আসবে। আর এই সাতটি দিনে যেন সবাই ঘরে থাকেন, সেটি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হবে। সবাইকে সুবিবেচনার পরিচয় দিতে হবে। লকডাউন সফল করতে সব মানুষকে সহায়তা করতে হবে।’

জানতে চাইলে প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এম এইচ লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘কোভিড-১৯ ভাইরাসের সুপ্তিকাল হচ্ছে ১৪ দিন। অর্থাৎ একজনের শরীরে ভাইরাসটি প্রবেশ করলে ১৪ দিন পর্যন্ত এটি ছড়াতে পারে। যে কারণে করোনাভাইরাসের জন্য লকডাউনের ন্যুনতম সময় হওয়া উচিত দুই সপ্তাহ। এক সপ্তাহ সময়ে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে আংশিক নিয়ন্ত্রণ হবে, পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ঘটবে না। ভিড় হয়, জনসমাগম হয় এমন কিছু খোলা রেখে গণপরিবহন বন্ধ অথবা এই জাতীয় পরিবহন যদি বন্ধ রাখা হয় তবে দুটি বিষয় হতে পারে। প্রথমটি হলো, করোনা ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে কোনো বাধা তৈরি হবে না। দ্বিতীয়ত মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। মানুষজন যখন ভিড় করে ঘুরবে তখন করোনা ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি আরও বেশি তৈরি হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গত বছরও দেখেছি মানুষজন সাধারণ ছুটির সময়ে দল বেঁধে উৎসব করতে গ্রামে গেছে। আমরা বলেছিলাম, এটি করলে করোনা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে। বর্তমানে সেই গ্রামে যাওয়ার উৎসব যদি তৈরি হয় তবে করোনা সংকট বা দুর্যোগ আমাদের দেশে যে কয়টা জেলা শহরে রয়েছে তার থেকে বাকি শহরে ছড়িয়ে পড়বে। মানুষের মৃত্যুর ভোগান্তি আরও বাড়বে। অতএব লকডাউনের নামে এমন কিছু না করে যদি শুধু নিয়ন্ত্রণের জায়গাতেই থাকা যেত তবে বেশি ভালো হতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাজ্য থেকে যারা দেশে আসছে তাদের আমরা দেশে আসার অনুমতি দিচ্ছি। কিন্তু সেই দেশটা কিন্তু আমাদের লোকজনকে নিচ্ছে না। তারা বন্ধ করে দিয়েছে। ইউরোপের সব দেশের ফ্লাইট আমরা বন্ধ করেছি, কিন্তু যুক্তরাজ্যের সঙ্গে করিনি। অথচ আমাদের দেশে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টই ছড়িয়েছে। এটি স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ও পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য।’

ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘পরিস্থিতি বোঝার জন্য ন্যুনতম দুই সপ্তাহের লকডাউন প্রয়োজন যেটা প্রকৃত অর্থে কার্যকর হবে যথাযথ মনিটরিং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। এক সপ্তাহ লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতি বোঝা যাবে না। দুই সপ্তাহ লকডাউন দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি যদি পাড়া-মহল্লা ভিত্তিক তদারকির ব্যবস্থা করা যায় ও একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে মনিটরিং করা হয় তবে কার্যকারিতা পাওয়া যাবে। একই সঙ্গে আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ভ্যারিয়েন্টসহ অন্যান্য ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন আনার ব্যবস্থাও করা জরুরি।’

স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কার্যকরী সদস্য ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সংক্রমণ বাড়বেই। আর তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সুনির্দিষ্টভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা। উৎস ও উৎপত্তিস্থলগুলো বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব হয়ে যেতে পারে। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানার যথাযথ পরিকল্পনা করে ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আসলে একদিন বা দুই দিন যদি সংক্রমণের মাত্রা কমে তবে সেক্ষেত্রে আসলে রিল্যাক্স হওয়ার উপায় নেই। এক্ষেত্রে টানা এক সপ্তাহ যদি কমতে থাকে তবে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলা যেতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে আসলে এক সপ্তাহের লকডাউনে সংক্রমণের প্রভাব বোঝা যাবে না। আর তাই অন্তত দুই সপ্তাহের লকডাউন প্রয়োজন যেটা সত্যিকার অর্থে কার্যকর করা হবে। এখন যেভাবে দোকানপাট, গণপরিবহন খুলে নিষেধাজ্ঞা বলা হচ্ছে তাতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হবে না। যদি কার্যকরী লকডাউন দিয়ে দুই সপ্তাহের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি যথাযথভাবে নজরদারি করা যায় তবে হয়তোবা আমরা পরিস্থিতির উন্নতি বুঝতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘কার্যকরি লকডাউনের পাশাপাশি এ সময়ে অস্বচ্ছল মানুষদের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিলে তাদের নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যদি কারো পজিটিভ পাওয়া যায় তবে তাদের আইসোলেশন ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কারণ বাসায় আইসোলেন সবসময় সবার পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। এসব বিষয় নিয়েও ভাবা প্রয়োজন আসলে।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক ডা. শাহরিয়ার রোজেন বলেন, ‘লকডাউন কার্যকর করার জন্য প্রয়োজন কিছু পরিকল্পনা করা যেমনটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যের প্রেক্ষাপটে দেখা গেছে, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ স্তর-ভিত্তিক (step-wise) প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রয়োগ করে যেখানে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে সব জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়। লকডাউন দেওয়া হয় একেবারে শেষ পর্যায়ে। আশা করছি এবার যে লকডাউনের কথা বলা হচ্ছে সেটি যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমেই প্রয়োগ করা হবে। তবে এক সপ্তাহের লকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে কিছুটা শঙ্কা থেকেই যায়। কারণ কোভিড-১৯ ভাইরাসের সুপ্তিকাল কিন্তু দুই সপ্তাহ। তাই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে দুই সপ্তাহের লকডাউন দেওয়া বিষয়ে ভাবা যেতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘যে কোনো দেশের জন্যই লকডাউন বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী পরিকল্পনা, যথাযথ প্রয়োগ এবং সঠিক সমন্বয়। এক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটা ভালো সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। আর সেই হিসেবে শুরুতে লকডাউন ঘোষণা না করে স্টেপ বাই স্টেপ ক্লাস্টারভিত্তিক এগুনোটা ভালো। অর্থাৎ অতি সংক্রমিত এলাকায় ক্লাস্টার পদ্ধতিতে বা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচনা করে লকডাউন দিলে বেশি কার্যকর হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজন দুই ধরনের পরিকল্পনা। প্রথমটি হবে স্বল্পমেয়াদী ও দ্বিতীয়টি হবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার অধীনে অবশ্যই দুই সপ্তাহ লকডাউন দেওয়া প্রয়োজন। তবে দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ ভাইরাস বেশি ছড়ায় জনসমাগম থেকে। যেখানে মানুষের ভিড় বেশি হয় যেমন সামাজিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার, পিকনিক স্পট, রাজনৈতিক জনসভাসহ এমন স্থানগুলোতে সংক্রমণ ছড়ায়। আর তাই দীর্ঘমেয়াদে এই জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’

জনসমাগম নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ডা. রোজেন বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদে দুই ধরনের পরিকল্পনা করতে হবে। প্রথমটি হলো সামাজিক ও দ্বিতীয়টি হলো অর্থনৈতিক। এক্ষেত্রে যদি সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার কমে আসে তবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা শিথিলতা দেখানো যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানো যেতে পারে। কিন্তু এ সময় সামাজিক ভাবে যেকোনো ধরণের জনসমাগমকে নিরুৎসাহিত করতেই হবে। ভাইরাস বেশি ছড়ায় এমন কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান, পিকনিক স্পট, রাজনৈতিক সমাবেশ কঠোরতার সঙ্গে নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন সংক্রমণের মাত্রা কমে আসার আগ পর্যন্ত।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে লকডাউন ঘোষণার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে মানুষকে গ্রামমুখী হওয়া থেকে বিরত রাখা। লকডাউনকে মানুষ সাধারণ ছুটি মনে করে গ্রামের বাড়িতে ছুটলে চরম সর্বনাশ হয়ে যাবে। কারণ তারা ঢাকা শহর থেকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারে বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট। দেখা গেলো কেউ যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইউরোপের তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী মারাত্মক ভ্যারিয়েন্ট হলো এই যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্ট। যা ৩০-৫০ শতাংশ বেশি সংক্রামক এবং ৫৫ শতাংশ বেশি প্রাণঘাতী। এক্ষেত্রে যদি এটি গ্রামে কেউ বয়ে নিয়ে যায় তবে সেটি হবে আত্মঘাতী। যেকোনো মূল্যে মানুষকে তাই গ্রামমুখী হওয়া প্রতিহত করতে হবে।’

এদিকে অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন ছাড়া নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে মতামত দিয়েছে দেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

৯ এপ্রিল দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ৮টায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩০তম সভা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ।

সভায় গৃহীত সুপারিশের বিষয়ে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সারাদেশে উদ্বেগজনকভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত ১৮টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। পরবর্তীতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকেও করোনা নিয়ন্ত্রণে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়। এগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে না এবং সংক্রমণের হার বাড়ছে। বিধিনিষেধ আরও শক্তভাবে অনুসরণ করা দরকার ।

অন্তত দুই সপ্তাহের জন্য পূর্ণ লকডাউন ছাড়া এটা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না বলে সভায় মতামত ব্যক্ত করা হয় বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগে সংক্রমণের হার বিবেচনা করে আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে সিটি করপোরেশন ও মিউনিসিপ্যালিটি এলাকায় পূর্ণ লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

এর আগে, দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের একবছর পেরিয়ে এসে গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ফের বাড়তে থাকে সংক্রমণ ও করোনায় মৃত্যু। এ পরিস্থিতিতে গত ২৯ মার্চ সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে, যাতে সবাইকে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ নিশ্চিত করতে বলা হয়। পরে গত ৪ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে ৫ এপ্রিল থেকে একসপ্তাহের জন্য সব ধরনের জনসমাগম ও যানচলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। মোট সাত দফা নির্দেশনা দেওয়া হয় সবার জন্য।

তবে এই নির্দেশনায় অফিস-আদালত বন্ধ রাখতে বলা হয়নি, নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সীমিত লোকবল নিয়ে অফিস চালাতে বলা হয়। এই বিধিনিষেধ কার্যকরের একদিন পর ৬ এপ্রিল সরকার জানায়, ৭ এপ্রিল থেকে ঢাকাসহ দেশের ১১টি সিটি করপোরেশনে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলবে। এ ক্ষেত্রে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করা যাবে, মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি।

এদিকে, ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জানায়, শুক্রবার (আজ) থেকে দোকানপাট ও শপিং মল খোলা রাখতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে দোকানপাট ও শপিং মল।

১১ সিটিতে গণপরিবহন চালু ও শুক্রবার থেকে দোকানপাট খোলার সিদ্ধান্তের পর বিধিনিষেধ করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কেননা, এই দুই সিদ্ধান্তের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ জারির পরই সেই বিধিনিষেধ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আসছিলেন স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা। তারা সরকারের জারি করা বিধিনিষেধকে ‘স্ববিরোধী’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন