রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে মেট্রো রেলের এমআরটি লাইন-৬। এর মাধ্যমে ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল যাওয়া যাবে। এ ট্রেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুরোটাই বিদ্যুতের মাধ্যমে চলবে। মেট্রো রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেট্রো রেল প্রকল্পের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘এমআরটি লাইন-৬-এর মোট ১৬টি স্টেশন থাকবে। এসব স্টেশনে গড়ে ৪৫ সেকেন্ড করে থামবে ট্রেন। ট্রেনের গতি থাকবে ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার। কিন্তু এই গতিতে চলবে না ট্রেন। প্রতিটি স্টেশনে থামা, বিভিন্ন বাঁকে কম গতিতে চলাসহ সবমিলিয়ে দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেনটির যেতে সময় লাগবে ৩৮ মিনিট।’
মেট্রো রেলে প্রচলিত ইঞ্জিন থাকছে না বলে জানান এই কর্মকর্তা। তাহলে ইঞ্জিন ছাড়া ট্রেন ঘুরবে কীভাবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইঞ্জিন বলতে যা বোঝায়, তেল দিতে হয়, এরকম নয়। কিন্তু একটা কিছু ঘোরাতে হলে মোটর লাগবে। সেজন্য কোচের নিচে চাকার কাছে মোটর লাগানো থাকবে। বিদ্যুতে মোটর ঘুরবে, তারপর ট্রেন সামনে যাবে। শতভাগ বিদ্যুতের মাধ্যমে ট্রেন চলবে।’
এ বিষয়ে ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ‘ট্রেন ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে না। তাকে গতি কমিয়ে চলতে হবে। এগুলো ট্রায়াল রানের মাধ্যমে সিস্টেমটাকে ফিক্সড করা হবে, স্থায়ী করা হবে। তারপরই এটা অটো চলা শুরু করবে। এই ট্রায়াল রানটা আমরা করব।’
তিনি বলেন, ‘ট্রায়াল রান করার জন্য তিনটা স্টেশনের প্রয়োজন হয়। তবে আমরা পাঁচটা স্টেশনে ট্রায়াল রান করব।’
ট্রায়াল রান ব্যাখ্যা করে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘অনেকগুলো সিস্টেমের সমন্বয় হলো মেট্রো রেল। সবগুলো জিনিস যেগুলো ফিক্সড করা হয়েছে, যেগুলোর এর সঙ্গে সিনক্রোনাইজ হবে। দেখা হবে, সবগুলো জিনিস ঠিক আছে কি-না। উদাহরণ দিই, ট্রেন যখন উত্তরা থেকে ছাড়বে, এখানে হয়তো ৩০ সেকেন্ড থামবে। তারপর যখন একটা বড় স্টেশনে যাবে, যেমন মিরপুর-১০, সেখানে কিন্তু অনেক মানুষ উঠবে। সেখানে ৩০ সেকেন্ড দিলে হবে না। সেখানে দিতে হবে ৪৫ সেকেন্ড বা ১ মিনিট। এই জিনিসগুলোর সঙ্গে সিনক্রোনাইজ হতে হবে। ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গে গেট খুলবে। ভেতরে ঘোষণা হবে কোন স্টেশনে আসছে, তারপর একটা সিকিউরিটি গেট আছে সেটা খুলবে। এই সবকিছু সিনক্রোনাইজ করতে হবে। এই সিনক্রোনাইজ একটা খুবই সফিস্টিকেটেড, যা সম্পর্কে আমাদের আগে ধারণা ছিল না। এখন ধারণা হয়েছে।’
এম এ এন ছিদ্দিক আরও বলেন, ‘উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করার কথা, এর কাজে অনেক এগিয়ে গেছি। যেটা দিয়ে বিদ্যুতে ট্রেন চলবে, সেটাও আমরা স্থাপন করেছি। আপনারা দেখেন যে, একটা তার ঝুলছে। এই তার দিয়েই কিন্তু ট্রেনটা চলবে। এটার জন্য ১৫০০ ভল্টের প্রয়োজন হবে। জাতীয় গ্রিড থেকে এখানে রিসিভিং সাব-স্টেশন করেছি। সেখান থেকে আমাদের এখানে বিদ্যুৎ আসবে। তাছাড়া নিজস্ব জেনারেটরও থাকবে। ট্রেন চলাচল করবে, তার মাধ্যমেও বিদ্যুৎ জেনারেট (উৎপাদন) হবে।’
অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেল পরিপূর্ণভাবে চালু হবে।
যাত্রী পরিবহন কবে শুরু হবে জানতে চাইলে এমডি বলেন, ‘আমাকে ট্রায়াল রান শুরু করতে দেন, তারপরে বলতে পারব। ১৬ ডিসেম্বর চলাচল শুরুর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে।’