হাটহাজারীতে নিষিদ্ধ ‘খতমে বুখারি’ কেন বারিধারা মাদ্রাসায়

1385
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

মাওলানা মাজহার আল কুরাইশী: দেশের সব কওমি মাদ্রাসা হাটহাজারী মাদ্রাসার যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নিলেও হাটহাজারীতে বন্ধ হওয়া ‘খতমে বুখারি’ অনুষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছে অনেক মাদ্রাসা। রাজধানীর কূটনৈতিক পাড়াসংলগ্ন জামিয়া রহমানিয়া মাদানিয়া বারিধারা মাদ্রাসায় আগামী ১১ মার্চ বড় পরিসরে ‘খতমে বুখারি’ আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।

এভাবে স্বার্থ হাসিলের জন্য হাটহাজারী মাদ্রাসার সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এমনকি হাটহাজারী মাদ্রাসায় এ অনুষ্ঠান আর করা হচ্ছে না জেনেও মুফতি মনির হোসেন কাসেমী তার দখলকৃত বারিধারা মাদ্রাসায় অর্থের লোভে ‘খতমে বুখারি’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। এতে জুনায়েদ বাবুনগরীসহ বিশিষ্ট আলেমদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বারিধারা মাদ্রাসায় তার কর্তৃত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন।

‘খতমে বুখারি’ অনুষ্ঠান পালনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থ উপার্জন। সম্প্রতি দখলকৃত বারিধারা মাদ্রাসাটিতে ‘খতমে বুখারি’ আয়োজন করার মধ্য দিয়ে মনির হোসেন কাসেমীর অবস্থান সুদৃঢ় ও পাকাপোক্ত করাই মূল উদ্দেশ্য। অনুষ্ঠানে আগত অতিথি জুনায়েদ বাবুনগরীসহ অন্যদের ঢাল বানিয়ে তিনি তার রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের পাশাপাশি বিভিন্ন উৎস থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায়ের উৎসবে নেমেছেন। এক্ষেত্রে জুনায়েদ বাবুনগরীর পাশাপাশি বারিধারা মাদ্রাসার স্বপ্নদ্রষ্টা আল্লামা নুর হোসেন কাসেমীর ছেলে জাবের কাসেমীকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে নুর হোসেন কাসেমীর দীর্ঘদিনের অর্জিত সুনামকে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

‘খতমে বুখারি’ অনুষ্ঠানসহ নানা অনুষ্ঠানের বাহানায় মনির হোসেন কাসেমী প্রায়শই মাদ্রাসার সাবেক ছাত্রদের আমন্ত্রণ জানিয়ে শক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে থাকেন।

সহীহ বুখারি শরীফের শেষ হাদিসটি যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাইরের আলেম দ্বারা পড়িয়ে শেষ করা হয়, তাই আমাদের দেশে ‘খতমে বুখারি’ নামে পরিচিত। প্রথাগতভাবে মাদ্রাসায় বুখারি শরীফ শেষ করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন মাদ্রাসায় বহিরাগত আলেমদের দাওয়াত দিয়ে ‘খতমে বুখারি’র আয়োজন করা হচ্ছে।

যিনি সারা বছর মেহনত করে পুরো বুখারি শরীফ পড়াতে পারেন তিনি কি শেষের একটি হাদিস পড়াতে পারবেন না? শেষের একটি হাদিস পড়ানোর জন্য ভাড়া করে শায়েখ আনার কথিত রেওয়াজটি মূলত নিয়মিত পুরো বুখারি শরীফ পাঠ করা আলেমের অধিকার হরণ ও এক প্রকার অপমানজনক অনুষ্ঠান ছাড়া আর কিছু না। বর্তমানে এ অনুষ্ঠান এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে, এটি আসলেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান নাকি টাকা আয়ের উৎস তা বোঝা মুশকিল।

বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলো উপমহাদেশের অন্যতম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের কারিকুলাম ও নীতি অনুসরণ করে আসছে। দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম আল্লামা আবুল কাসেম নোমানী বলেছেন, বর্তমানে বিভিন্ন মাদরাসায় খতমে বুখারির নামে যে মাত্রাতিরিক্ত প্রথা চালু হয়েছে তা শরিয়তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সর্ববৃহৎ কওমি মাদ্রাসা ও ইসলামি বিদ্যাপিঠ হাটহাজারী মাদ্রাসায় প্রতি বছরই ‘খতমে বুখারি’ আয়োজন হলেও চলতি বছর থেকে মাদ্রাসার পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক এ অনুষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন