পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আদর্শগতভাবে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অত্যন্ত অবিচল, কিন্তু একইসঙ্গে দেশের সর্বোত্তম স্বার্থ নিশ্চিত করতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বাস্তববাদী। আর এজন্য তিনি সর্বজনীন মূল্যবোধ ও নীতির ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্টার ফর বাংলাদেশ স্টাডিজের যৌথ উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মঙ্গলবার (২ মার্চ) জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওয়েবিনারটির প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন পুরস্কার বিজয়ী সাংবাদিক ও লেখক সলীল ত্রিপাঠি, ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার অনার পাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সিনিয়র কূটনীতিক থমাস এ ডাইন এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। অনুষ্ঠানটিতে স্বাগত বক্তব্য দেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা। প্যানেল আলোচনা পর্বের সঞ্চালক ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইনস্টিটিউট ফর সাউথ এশিয়া স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ড. সঞ্চিতা বি. সাক্সেনা।
উদ্বোধনী বক্তব্য জাতির পিতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গি ও আদর্শ যা ১৯৭৪ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে তার প্রথম বাংলায় ভাষণে প্রতিভাত হয়েছিল, তা অনুসরণ করেই বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক অব্যাহত রয়েছে। সে সময়ের বৈশ্বিক অর্থনীতির অসমতা দূর করতে বঙ্গবন্ধু মানুষের ভ্রাতৃত্ব ও একাত্মতার শক্তির পুনর্জাগরণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন যা আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক; বিশেষ করে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে আজ যখন বিশ্ব উন্নয়ন ব্যবস্থা অত্যন্ত ভঙ্গুর, ঠিক এ সময়েই জাতির পিতার সেই আহ্বানের বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ’
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের উদাহরণ টেনে তিনি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের প্রশংসা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতির পিতার ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ নীতি-আদর্শ উল্লেখ করে বলেন, ‘এ আদর্শই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির ভিত্তি এবং এ আদর্শ অনুযায়ীই ভবিষ্যতে পরিচালিত হবে বাংলাদেশ। ’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পররাষ্ট্রনীতি গতিশীল পররাষ্ট্রনীতি হিসেবে চিহ্নিত, বিশ্বে যার রয়েছে নিরপেক্ষতার খ্যাতি এবং উচ্চ নৈতিক অবস্থান; আর এ কারণেই অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে বিশ্বের প্রায় সব দেশের স্বীকৃতি অর্জন করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ’
লেখক ও সাংবাদিক সলীল ত্রিপাঠি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ছিলেন ‘অন্তর্ভূক্তিমূলক জাতীয়তাবাদ’ এর প্রবক্তা, যার শিকড় নিহিত ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে। ’
জাতির পিতা যে সব আদর্শ রেখে গেছেন তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান এবং উদাহরণ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারীদের সম্মানজনক পুনর্বাসনে যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, সলীল ত্রিপাঠি বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য কর্নেল হু উড নট রিপেন্ট: দ্য বাংলাদেশ ওয়ার অ্যান্ড ইটজ্ আনকোয়ায়েট লিগ্যাসি’ শীর্ষক বইয়ের লেখক।
অন্যদিকে, কূটনীতিক থমাস এ ডাইন একাত্তরের মুত্তিযুদ্ধের সময় মার্কিন প্রশাসনের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে আলোকপাত করেন এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরে উন্নয়ন ও অগ্রগতির উজ্জ্বল উদাহরণ সৃষ্টি করে সে সময়ের মার্কিন নেতৃত্বকে ভুল প্রমাণ করার জন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করেন।
এছাড়া, বঙ্গবন্ধু কীভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছিলেন তা বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে উল্লেখ করেন অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ অন্য আলোচকরা। ওয়েবিনারে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, কূটনীতিক, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।