স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপির অনীহা

1277
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

মো. শফিকুল ইসলাম: চার দফায় ২০১টি পৌরসভা নির্বাচনে জামানত হারিয়েছেন বিএনপির ৯১ মেয়র প্রার্থী। বিজয়ী হয়েছেন মাত্র ১০ জন। পরাজিত কিংবা বিজয়ী বিএনপির বেশিরভাহ প্রার্থীই ক্ষমতাসীন দলের অধীনে আর কোন নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি না। প্রার্থীদের মধ্যেও উৎসাহ-উদ্দীপনাও কম। নির্বাচনে নিয়ে দলের স্থানীয় হেভিওয়েট প্রার্থীদের আগ্রহও দিন দিন হারাচ্ছে। তৃণমূলের সাথে দলের হাইকমান্ড নেতৃবৃন্দদের মধ্যে বিভক্তি প্রকট হচ্ছে। আগামী ধাপের স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে অনীহা কাজ করছে অনেক নেতার। এমনটি জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা।

তৃণমূলের নেতারা বলছেন, বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপির জন্য নির্বাচন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অনীহা রয়েছে। তবে অনেক এলাকার শুধু নিজের রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখতেই তারা নির্বাচনের মাঠে থাকছে। শুধুমাত্র নিজ এলাকার জণগণের কাছে পৌছাতেই অংশ নিয়েছেন। এ ধরনের নির্বাচনে অংশ নেয়ায় মামলা হামলার পাশাপাশি আর্থিক, শারীরিক ও মানসিকভাবেও চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন তারা। জাতীয় থেকে স্থানীয়- সব নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ও তার ফলাফল দলে যে বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে তা বিবেচনা করার সময় এসেছে বলে মনে করছেন তৃণমূল।

বিএনপির জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে না পেরে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। তবে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আর কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাইছেন না। নির্বাচনের দিন ভোট বর্জন করা চেয়ে আগেই সরে দাড়ানো ভালো। নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা চালানোর কোন উপায়। বিএনপির নেতাকর্মীদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। হামলা করছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। শুধু শুধু নির্বাচনে গিয়ে নেতাকর্মীদের আরো বেশি মামলার আসামি করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যেও একটা চাঙ্গাভাব তৈরি হয়েছে। বিএনপি ভোটে অংশ নিচ্ছে বলেই সরকারের চরিত্র জনগণ জানতে পারছে। তারা বুঝতে পারছে এই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে নন। এ ছাড়া সাংগঠনিকভাবে দলে গতি এসেছে। সরকার পরির্বতনের জন্য জনগণ সুযোগের অপেক্ষায় আছে।

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত চার ধাপে অনুষ্ঠিত ২০১টি পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির ৯১ জন মেয়র প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আর জয়ী হয়েছেন মাত্র ১০ জন। মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে হওয়া স্থানীয় পর্যায়ের এই নির্বাচনে এমন ফল মেনে নিতে পারছেন না ধানের শীষের প্রার্থীরা।

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভার পরাজিত মেয়র প্রার্থী মোতাহার হোসেন মানিক বলেন, নির্বাচনে প্রশাসনযন্ত্র প্রত্যক্ষভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। পুলিশ, মেজিস্ট্রেসি, রিটার্নিং অফিসার সবাই একযোগে সিল মারার মহাউৎসবে মেতেছিল। জনগণকে আর কষ্ট করে ভোট দিতে হয়নি।

বগুড়ার গাবতলি পৌরসভায় মেয়র পদে জয়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, এটাকে নির্বাচন বলে না, এটা একটা তামাশা। আমি মনে করি, বিএনপির আর কোনো নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। বিশেষ করে এই সরকার আর নির্বাচন কমিশনের আমলে।
দলটির তৃণমূলের নেতারাও এখন প্রশ্ন তুলছেন এ ধরনের নির্বাচনে অংশ নেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে।

শরিয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আহমেদ আসলাম বলেন, এই প্রহসনমূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণ আর কতকাল করবো! আমরা যারা মাঠে আছি তারা তো অ্যাফেক্টেড। আমাদের টাকা যাচ্ছে, জোর হারানো হচ্ছে। মামলা খাচ্ছি। আহত হচ্ছি, হাসপাতালে যাচ্ছি। কিন্তু ফলাফল কি? জনহণকে যা জানানোর তা জানানো হয়ে গেছে। আমরা সরকারকে বলছি অবৈধ, আবার আমরাই এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাচ্ছি। জনগণই এখন প্রশ্ন করছে- তোমরা কি চাচ্ছ?

মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা বিএনপির সহ সভাপতি রাহাদুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ভোটার কেন আসছে না ভোট দিতে? কারণ আমাদের যে নেতৃত্ব সে নেতৃত্বের ওপর ভোটাররা বিশ্বাসী না। বিএনপির জনসমার্থক তো কম নয়। তারা মামলা ও হামলার ভয়ে কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে ভয় পাচ্ছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দিন পরিবর্তনকে বলেন, জনগণ যাকে ভোট দেবে সেই আসবে, সেটাকে সামনে রেখেই আমরা বারবার নির্বাচনে যেতে চাই। নির্বাচনে না গেলে বলা হবে, ভয়ে যাচ্ছে না বিএনপি। জনগণকে দেখাতে চাই যে আমরা অনেক উদার। দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দও চেষ্টা করছেন উত্তর খোঁজার। এই ভাবে কোন নির্বাচন হতে পারে না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বীর বিক্রম মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমার ২০১৮ এর নির্বাচনে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। আমাকে দু হাজার ভোট দেয়া হয়েছে। এই নির্বাচন কোনো নির্বাচন নয়। ভোট ডাকাতি হচ্ছে। মনে হয় এখন সময় এসেছে একটি ওপেন মাইন্ড নিয়ে শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ চেয়ারম্যানের একটা সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ দ্রুত- আমরা এ ধরনের নির্বাচনে আর যাব কিনা।

জানতে চাইলে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। নষ্ট রাজনীতি নষ্ট মানুষ তৈরি করে। দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন দুর্নীতিবাজ তৈরি করে। জাতীয় মূল সংকট আড়াল হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী-সরকার এর দায় এড়াতে পারবেন না। অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার গঠন করছেন, এর মাধ্যমে দুর্নীতি দূর করা যায় না। সরকার যাকে মনোনয়ন দিচ্ছে, তারাই নির্বাচিত হচ্ছে। নির্বাচনের নামে তামাশা, প্রহসন হচ্ছে।

উল্লেখ্য, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম ধাপের পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৩২৩ ইউনিয়ন পরিষদে ভোট ১১ এপ্রিল। একই দিনে ষষ্ঠ ধাপে ৯টি পৌরসভার ভোটও হবে। সারাদেশে ৪ হাজার ৪৮৩ টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ৭ ধাপে অনুষ্ঠিত হবে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন