নিজস্ব প্রতিবেদক:
ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছিল মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, দেশ ভাগের আগে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা যখন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য পাঁয়তারা করছিলেন, তখনই বঙ্গবন্ধু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা বলেছেন। ১৯৪৮ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় আসার পর প্রথম যে বৈঠকটি কার্জন হলে হয়েছিল, সেই সভায় নানা ধরনের প্রতিবাদ হয়েছিল, সেখানেও নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সমস্ত ঘটনার সাক্ষ্যপ্রবাহ বলে, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পেছনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাব আয়োজিত ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। আলোচনায় অংশ নেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ, প্রেস ক্লাবের সেমিনার উপ-কমিটির আহবায়ক আইয়ুব ভূঁইয়া প্রমুখ।
তথ্য মন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলন সংগঠিত করার অপরাধে শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৪৯ সালে গ্রেপ্তার করা হয়। একটানা বায়ান্ন সাল পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে থাকাকালে তিনি কিন্তু বসে ছিলেন না। সেখানে বসে তিনি ভাষা আন্দোলন করার ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এমনকি তিনি জেলখানায় অনশন করেছেন। ভাষা আন্দোলন করায় যে অন্যায় করা হচ্ছে, বাধা দেওয়া হচ্ছে সেগুলোর প্রতিবাদে ফরিদপুরের জেলখানায় বসে তিনি অনশন করেছেন। এ বিষয়গুলো আগে জনসম্মুখে প্রকাশিত হয়নি। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেছিলেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালন ১৯৫৬ সালে শুরু হয়। শহীদ মিনার সরকারিভাবে নির্মাণ করা এবং সেটির পৃষ্ঠপোষকতা করা, এটিও ৫৬ সালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে সরকার গঠন করার পর শুরু হয়। তার আগে কিন্তু সেটি হয়নি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং এখন যে সিক্রেট ডকুমেন্টগুলো বের হচ্ছে, সেগুলো যদি কেউ পড়ে তাহলে বুঝতে পারবে, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা চিন্তা করেছিলেন। তিনি সেই লক্ষ্যে কাজ করেছেন।
বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনো একটি বিষয় কখন বলতে হয় সেটা বঙ্গবন্ধু জানেন। সেজন্যই তিনি রাজনীতির কবি। বঙ্গবন্ধু ৬৬ সালে যদি ছয় দফা দাবি উত্থাপন না করে স্বাধীনতার কথা বলতেন তাহলে আজকে স্বাধীনতা আসত না। ছয় দফা দাবি উত্থাপন করে প্রথমে তিনি বাঙালির মনে স্বাধীনতার জন্য মনন তৈরি করেছিলেন। তিনি জানতেন সত্তর সালের নির্বাচনের পর পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। তারপর কী করতে হবে, সেই পরিকল্পনাও তিনি তৈরি করে রেখেছিলেন। সেই পরিকল্পনা অনুসারে কিন্তু তিনি ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছেন। সেই ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি কার্যত স্বাধীনতা ঘোষণা করে ফেলেছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন শুধু এ ঘোষণাটা তিনি করেননি। ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অনেকেই লিখেছেন, ‘চতুর শেখ মুজিব কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন সেই কথা বলেননি।’ তিনি আরও বলেন, মাতৃভাষার বিষয়ে ইউনেস্কো জানিয়েছিল কোনো ব্যক্তি আবেদন করলে সেটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এ জন্য রাষ্ট্রকে আবেদন করতে হবে। এ খবর যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানলেন তখন হাতে মাত্র দুইদিন সময়। দুই দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো কোনো রাষ্ট্রের পক্ষে সম্ভব না। কিন্তু শেখ হাসিনা শুধু প্রস্তাব পাঠাননি, এর জন্য লবিংও করেছেন ওই সময়ের মধ্যে। শিক্ষামন্ত্রীকে প্যারিসে পাঠিয়েছেন। সেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে, লবিং করেছেন এবং ভোটাভোটির মাধ্যমে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আর শহীদ মিনার সারা পৃথিবীতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার প্রতীক হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এটি হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মাধ্যমে। এটিও বাঙালি জাতির বড় অর্জন। সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দেশে ষড়যন্ত্র হয়েছে, হচ্ছে। সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।