নিজস্ব প্রতিবেদক:
খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির পাশপাশি যারা এ কাজ করছেন, তাদের কঠোর হাতে দমনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২১’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এই কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা ব্যবসা করতে চায় বা ব্যবসা করছে, দুই পয়সা বেশি কামাই করার জন্য, তারা এই ভেজাল দিতে থাকে, বা পচা-গন্ধযুক্ত খাবার আবার ব্যবহার করে। এই ব্যাপারে একদিকে যেমন সচেতনা সৃষ্টি করতে হবে..যে ঠিক আছে আপনারা পয়সা যেটা খরচ হবে সেটা নিয়েন। লাভের অংশও ওইভাবে হিসেব করেন। কিন্তু এইভাবে ভেজাল দিয়ে মানুষের ক্ষতি করবেন না। একদিকে যেমন তাদেরকে বোঝানো, তাদের ভেতর সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, অপরদিকে যেটা করতে হবে সেটা হলে কঠোর হস্তে এটা দমনও করতে হবে। দুইদিকে ব্যবস্থা নেওয়া একান্তভাবে দরকার। সেই ব্যবস্থাগুলো আপনাদের নিতে হবে। জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি ধন্যবাদ জানাব, ইতিমধ্যে আপনারা ঢাকা শহরে বিভিন্ন হোটেল এবং রেস্তোরাঁগুলো..সেগুলোতে গ্রেডিং স্টিকার দিয়ে দিচ্ছেন এবং মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এটা অত্যন্ত ভালো কাজ। এ কাজটা শুধু রাজধানীতে করলে হবে না। এটা সারা বাংলাদেশে করা দরকার। সেদিকে আপনারা যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারেন। এই ব্যাপারে নজরদারি বাড়ানোর জন্য আপনারা যে পদক্ষেপই নেবেন এই ব্যাপারে যা সহযোগিতা করা দরকার করব। এজন্য অর্থের প্রয়োজন করে অর্থমন্ত্রী ব্যবস্থা করবেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসময় অর্থমন্ত্রীকে ক্যামেরায় দেখানোর অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, “আমি যা বলে যাচ্ছি অর্থমন্ত্রীকে সাথে রেখেই বলে যাচ্ছি। অর্থমন্ত্রীও আছেন। আমি মনে করি যে, মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করবার জন্য যা প্রয়োজন সেটা আমরা করতে পারব। যদিও আমি জানি করোনার কারণে আমাদের যথেষ্ট সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে, কিন্তু তারপরও আমরা এই ব্যবস্থাটা নেব।”
‘টেকসই উন্নয়ন- সমৃদ্ধ দেশ নিরাপদ খাদ্যের বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চতুর্থবারের মতো পালিত হলো ‘জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস ২০২১’। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে খাদ্য মন্ত্রণালয়াধীন ‘বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে এবং সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের দ্বারপ্রান্তে। কিন্তু একটি টেকসই উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি খাদ্যের পুষ্টিমান ও নিরাপদতা নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে খাদ্য নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষ্য অর্জনে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত প্রচেষ্টায় ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন হয়েছে এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। জনগণের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সংস্থাটি বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। যেভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি তাতে একসময় দেশের মানুষ উন্নত দেশগুলোর ন্যায় খাদ্য সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। এ সময় কৃষিমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, দেশে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। এখন প্রয়োজন নিরাপদ খাদ্য। দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত না হলে চিকিৎসা খরচ ও দরিদ্রতা বাড়বে; আর খাদ্য নিরাপদ হলে রফতানির মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, এ সরকার মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ খাতে উৎপাদনে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বিভিন্ন ল্যাবরেটরি ও গবেষণা বিস্তারের মাধ্যমে খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে।