নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাহজাহান খান কি ছিলেন জানি না। ১৯৭২ সালের পর থেকে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা বলে দাবি করেন। জিয়াউর রহমান ও শাজাহান কি এক জিনিস? এই শাহাজান এখন মিটিং করছেন কিভাবে জিয়াউর রহমানের খেতাব প্রত্যাহার করা যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। শাজাহান খান আপনার খেতাব শুধু নয়, আপনার জীবনের জন্যও হুমকি হতে পারে।
বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির প্রতিষ্ঠার জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।
রিজভী বলেন, যদি একটা পটপরিবর্তন ঘটে, কারণ ৭২ থেকে ৭৫ আওয়ামী লীগের লোকজনদের খুঁজে খুঁজে মেরেছে এই শাহজাহান। কারণ তিনি একজন গণবাহিনীর নেতা। মাদারীপুরে জাসদের নেতা। যে লোকের কোনো ধরণের ভদ্রতা, সভ্যতা, দৃঢ়তা নেই সে খেতাব বাতিল করবে না তো কি করবে? ডাকাতের কি কোনো মনুষ্যত্ব থাকে? জিয়াউর রহমানের মত একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম জনগণের ধমনীতে বয়, তার মধ্যে একজন বীর খেতাব শাহজাহান খানের মত একজন ডাকাত কেড়ে নিতে চায়।
শাজাহানকে উদ্দেশ করে তিনি আরো বলেন, আপনাদের মনে আছে? পরিবহনের বাস যখন মানুষ চাপা দিয়ে মারে তখন সেটাকে তিনি বৈধতা মনে করেন। পরিবহনের বাস শিশুদের থেঁতলে দিয়ে যায়, আর তিনি হাসতে হাসতে বলেন এগুলো কিছুই না।
তিনি আরো বলেন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম একজন নন্দিত আইনজীবী, এক টকশোতে রফিকুল ইসলামকে এই শাজাহান খান বলেন, আপনার চোখ তুলে নেব। যে লোকের মুখ থেকে চোখ তুলে নেব, মারব, রক্তাক্ত করব এই শব্দ বের হয় সে তো ডাকাত, সন্ত্রাসী, মাফিয়া।
হুশিয়ারি দিয়ে রিজভী বলেন, ‘জিয়ার রহমানের নাম সবার হৃদয়ে আছে। কয়েকজন সন্ত্রাসী মাফিয়া খেতাব বাতিলের কথা বললে জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক অবদান মুছে যাবে না।
চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমান বলেন, এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। এই সরকারের সঙ্গে জনগণ নেই। এ জন্যই জনগণকে ভয় পায়। এই সরকার বিচারবিভাগ ধ্বংস করে দিয়েছে, এই সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়েছে। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে, যারা মন্ত্রীপরিষদে রয়েছে, এমপি রয়েছে তারা সবাই লুটপাট করছে। নব্বয়ের চেতনায় একটি গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারকে উৎখাত করতে হবে। এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে আবার জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমরা এই সরকারকে আর কোনো নির্বাচনের সুযোগ দেব না। আবার ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসবেন? এটা বাংলাদেশে হতে পারে না। তাই সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে আন্দোলন করে ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বানের স্রোতের মতো নেতা-কর্মীরা আসছে। এই বানের স্রোতে একেক করে ভেসে যাবে মাফিয়া সরকারের সমস্ত আসর। অল্প কয়েকজন মানুষকে আটকে রেখে কিছু করতে পারবেন না। বানের স্রোতের মতো নেতা-কর্মীরা আসছে। এই বানের স্রোতের মধ্যে ভেসে যাবে মাফিয়া সরকারের সমস্ত আসর এক এক করে। সেই দিন পর্যন্ত ক্লান্তহীনভাবে আমরা আন্দোলনের মধ্যে থাকবে।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান জীবিত নাই। বেগম খালেদা জিয়া বন্দি। তারেক রহমান দেশের বাইরে। এই কারণে মনে করেছেন সুযোগ পেয়েছেন? না, সুযোগ পান নাই। দয়া করে মনে রাখবেন। বিএনপি হচ্ছে সেই গরম পানি, যেই গরম পানি নরম ডিমকে শক্ত করে। শক্ত আলুকে নরম করে। যা করা দরকার তাই করব ইনশাল্লাহ।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্ঠা আব্দুস সালাম বলেন, ‘জিয়াউর রহমানে খেতাব কারো দয়ায় পাওয়া নয়। এটা অর্জন করেছেন তিনি। জনগণই তাকে এই খেতাব দিয়েছে। এটি কেড়ে নেওয়ার এখতিয়ার কারো নেই। সরকারকে অনুরোধ করব, এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না, যাতে করে আগামী দিনে বিএনপির সঙ্গে আপনাদেরকেও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য মাঠে নামতে হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আযাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, শ্রমিকদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারন সম্পাদক মাহবুব আলম বাদল, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন আলাল, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোস্তাফিজুর রহমান, ফখরুল ইসলাম রবিন, নিপুণ রায় চৌধুরী প্রমুখ।