দীর্ঘ সময় ধরে ডলারের বিপরীতে টাকার শক্তিশালী অবস্থানের কারণে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হারাচ্ছে দেশের রপ্তানিমুখী খাতগুলো। এ অবস্থায় টাকার অবমূল্যায়ন চান ব্যবসায়ীরা। বাজার বুঝে এ পথে হাঁটার পক্ষে অর্থনীতিবিদরাও। তবে, টাকা দুর্বল হলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে সেদিকে নজর রাখার পরামর্শ রাষ্ট্রায়ত্ত সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ব্যাংকের।
আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, রেমিট্যান্স বা বিদেশি বিনিয়োগ — এসবের হিসাব হয় সাধারণত মার্কিন ডলারের মানদণ্ডে। এমনকি অভ্যন্তরীণ মুদ্রা ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সুবিধা পেতে প্রতিটি দেশই ডলারের মাপকাঠিতে নিজ দেশের মুদ্রার মান বিবেচনা করে থাকে। এ ব্যবস্থায় ডলারের বিপরীতে যে দেশের মুদ্রা মানের যত পতন হয়; রপ্তানিবাজারে সে দেশ ততো বেশি দাপুটে হয়।
২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত ৫ বছরে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়ার মুদ্রার মানের ব্যাপক পতন হলেও শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে টাকা। আর এতেই বিপাকে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। ডিজাইন অ্যান্ড সোর্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কোম্পানি কস্টটা অনেক বেশি লোভনীয়, তারা রপ্তানি করলে বেশি পাচ্ছে, আমরা তো সে জায়গায় নেই, তাদের কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেটাতে দামটা আমাদের সমন্বয় করতে হচ্ছে, দাম কমানোর কারণে আমরা কিন্তু শেষ হয়ে যাচ্ছি।
বিকেএমইয়ের ১ম সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, অন্তত রপ্তানিকারকদের জন্য একটা ভিন্ন রেট দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করছি। যেহেতু আমরা যারা এক্সপোর্টার তারা কিন্তু আমাদের দেশের কারও সঙ্গে প্রতিযোগিতা নেই। এক লাফে বড় ধরনের না হলেও বাজার বুঝে ডলারের টাকার মান কমানোর পক্ষে অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, টাকা অবমূল্যায়নের দিকে যাওয়া যেতে পারে, তবে আমি আলাদা করে রপ্তানি খাতের জন্যে একচেঞ্জ রেটের কথা বলতে চাই না। ম্যানেজমেন্টসহ অনেক ধরনের সমস্যা হয়। তবে, করোনার ধাক্কা কাটিয়ে আবারও বাড়তে শুরু করেছে আমদানি বাণিজ্য। আবার টাকার অবমূল্যায়ন হলে বাড়বে মূল্যস্ফীতি। তাই কোন সিদ্ধান্তে আসার আগে এসব বিষয়কে গভীরভাবে আমলে নেয়া দরকার বলে মনে করেন ব্যাংকাররা। মুদ্রার মান পুনর্নির্ধারণের কারণে যেন অর্থপাচারের সুযোগ তৈরি না হয় সেদিকেও নজর রাখার পরামর্শ তাদের।