সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাস্তর একই জায়গায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন ভাতা হবে ২০ হাজার টাকা।
সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা প্রান্তে যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন। তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন গাজীপুর কালিয়াকৈর, কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ী খুলনা পাইকগাছা, চাঁদপুর হাইমচর, মৌলভীবাজার বড়লেখায় যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন।
গণভবন প্রান্তে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
তার আগে, প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টিবোর্ডের ৬৬তম সভায় অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তার মেয়াদে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাস্তবায়ন করার কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের মেয়াদে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘২১ বছর পরে যখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, তখন আমরা উদ্যোগ নিই জাতির কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে। সেই সঙ্গে অনেক দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে কিছু সহযোগিতার ব্যবস্থা করি। তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে দিই। আর যারা খেতাবপ্রাপ্ত তাদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করি।’
‘আমরা সেই ভাতা যখন চালু করি, তখনকার সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে মাসিক তিনশ টাকা করে শুরু করেছিলাম। আজকে তা ১২ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে। তবে মনে করি; এই সময় ১২ হাজার টাকা কিছুই না—’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কল্যাণ ট্রাস্ট বোর্ডের মিটিং ছিল, সেখানে এতগুলো ভাগ ভাগ না করার কথা বলেছি। আমার মনে হয়, এটির বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন এবং আমরা আমাদের তরফ থেকে তাদের ভাতা দেব। নিচের দিকে যে কয়টা স্লট আছে, সেগুলোকে এক জায়গায় নিয়ে এসে আমরা ২০ হাজার টাকা করেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বৃদ্ধি করব।’
‘তবে আজকে আমরা যেটা করেছি অনলাইনে ডিজিটাল পদ্ধতিতে যাবে। আজকে যে ভাতাটা যাচ্ছে সেটা সেভাবেই যাবে। আর এটা একটু করতে সময় নেবে। কারণ বাজেটের টাকা সব কিছু ব্যবস্থা নিতে একটু সময় লাগবে।’ তবে এটা আমরা করে দেব বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা একটা হিসাবও করেছি যে সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা এবং তারপরে যারা আছেন ১২ হাজার টাকা পান, এরপর আবার কেউ ১৫ হাজার কেউ ২০ হাজার , সেটা না করে সবাই ২০ হাজার টাকা থেকেই সবাই পাবেন। আর উপরে হয়ত যারা বীরশ্রেষ্ঠ তাদেরটা একটু আলাদা থাকবে বা বীর উত্তম তাদের আলাদা আছে। কিন্তু বাকি যারা আছেন, আমি মনে করি সবাইকে একসঙ্গে ভাতা দেওয়াটা ভালো। কারণ সবাই-ই তো মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা যে ভাতার ব্যবস্থা করেছি তাতে এখন যেমন আছে যারা শহীদ পরিবার তাদেরকে ৩০ হাজার টাকা করে দেওয়া, নিহত যুদ্ধাহত পরিবার ২৫ হাজার করে পান আর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ পরিবার মাসিক ৩৫ হাজার পান, বীর উত্তম খেতাবধারীরা মাসিক ২৫ হাজার টাকা, বীর বিক্রম ২০ হাজার টাকা এবং বীর প্রতীক ১৫ হাজার টাকা; এত ভাগ ভাগ না করে মোটামুটি এক জায়গায় নিয়ে আসা এটা আমার মনে হয় মন্ত্রণালয় আছে, হিসাব-টিসাব করে বা ট্রাস্ট বসে এটা ঠিক করে দেবে। ‘
‘বিশেষ করে ১৫ হাজার আর ১২ হাজার; এগুলো সব মিলিয়ে ২০ হাজারে নিয়ে আসলে তখন আমরা অর্থ্যাৎ বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক এবং অন্যান্য সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা সবাই সরাসরি ২০ হাজার টাকা করে ভবিষ্যতে পাবেন’ বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যারা বীরশ্রেষ্ঠ, তাদের পরিবারকে রেশনের ব্যবস্থা করেছি। যাদের ঘরবাড়ি ছিল না, আমি নিজের উদ্যোগে ঘর করে দিয়েছি। তাদের জন্য আমরা বাড়িঘর তৈরি করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা, তাদের কোনো গৃহ থাকবে না। তারা কষ্টে থাকবে, আমি যতদিন সরকারে আছি ততদিন এটি কখনও হতে পারে না। কাজেই তাদের প্রত্যেকের জন্য থাকার ব্যবস্থা করে দেবো। জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। তাদের আমরা রাষ্ট্রীয় সম্মান দিচ্ছি। সেভাবে আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি।’
মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে সবাইকে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা হাতে নেওয়া হয়েছে সে কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ।