করোনার সংক্রমণ নিয়ে নতুন তথ্য দিলো ডব্লিউএইচও

1300
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অনেক বেশি ছড়িয়েছিল। সংক্রমণের মাত্রা যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিনিধিরা। তদন্তকারীরা বলেন, তারা জরুরি ভিত্তিতে উহান শহরের লাখো মানুষের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে দেখার সুযোগ চেয়েছেন। তবে চীন এখনো তাদের সে অনুমতি দেয়নি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের উৎস শনাক্তে তদন্ত করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই প্রতিনিধিদল।

বিবিসিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, বেইজিং প্রথমে ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদলকে উহানে যেতে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কয়েক মাস ধরে সমঝোতা-প্রচেষ্টার পর অবশ্য উহানে সংস্থাটির প্রতিনিধিদের তদন্তকাজে ঢুকতে দিতে রাজি হয় বেইজিং।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে উহান সেন্ট্রাল হাসপাতালের চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াং সহকর্মী চিকিৎসকদের এক নতুন রোগের সম্ভাব্য সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে সতর্ক করার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ ‘অসত্য মন্তব্য’ করা থামাতে বলে এবং ‘গুজব ছড়ানো’ নিয়ে তদন্ত শুরু করে। পরে একই শহরের হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার সময় এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে ফেব্রুয়ারিতে মারা যান তিনি।

এরপর এপ্রিলে নানা সন্দেহ ও অভিযোগ ওঠে, ভাইরাসটি উহান শহরের একটি গবেষণাগার থেকে ছড়িয়ে থাকতে পারে। উহানে বন্য প্রাণীর কোনো বাজার থেকে করোনাভাইরাসের সূত্রপাত বলে ধারণা করা হয়। পরে সেখান থেকে ভাইরাসটি প্রাণী থেকে মানবদেহে প্রবেশ করে।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, উহান থেকে ভাইরাসটির সূত্রপাত না হয়ে সেখানে এটির শুধু বিস্তার ঘটে থাকতে পারে। গবেষকেরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, মানুষকে সংক্রমিত করতে সক্ষম এ ভাইরাস দশকের পর দশক ধরে অশনাক্তকৃত অবস্থায় থেকে বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়াতে পারে।

করোনার এই সূত্র অনুসন্ধানের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের উত্তেজনাও দেখা দেয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ওই ভাইরাসের প্রাথমিক সংক্রমণের বিষয়টি চীন চেপে গেছে বলে অভিযোগ করে।

ডব্লিউএইচও মিশনের প্রধান তদন্তকারী পিটার বেন এমব্যারেক সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘২০১৯ সালে উহানে করোনার সংক্রমণ ধারণার চেয়েও বেশি ব্যাপক ছিল।এ বিষয়ে তারা বেশ কিছু লক্ষণও খুঁজে পেয়েছেন। লক্ষণগুলোর একটি হলো সেখানে ওই বছরের ডিসেম্বরেই এক ডজনের বেশি করোনার ধরনের (স্ট্রেইন) সংক্রমণ শুরু হয়।’

তিনি বলেন, ‘চীনের কর্মকর্তাদের কথা অনুযায়ী দেশটিতে প্রথম যে ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান তদন্তকারীরা। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সী এই ব্যক্তি ৮ ডিসেম্বর আক্রান্ত হয়েছিলেন।’

উহান সফর করে সবে সুইজারল্যান্ড ফিরেছেন এমব্যারেক। সিএনএনকে তিনি বলেন, ‘করোনা উহান শহরে ডিসেম্বরেই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছিল-এটা আমাদের অনুসন্ধানে পাওয়া নতুন তথ্য।’

উহান সফরে তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য উদ্ঘাটন করতে পেরেছেন, তা করোনার উৎস শনাক্তে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া অন্য বিজ্ঞানীদের ভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এই বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার ব্যাপারে মধ্য ডিসেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানা গেলেও প্রকৃতপক্ষে এ ভাইরাসের সংক্রমণ অনেক আগেই চীনে ছড়িয়ে থাকতে পারে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন