শীতকালে করোনা আরও মারাত্মক হতে পারে বলে সতর্ক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশেও বাড়বে বলে মন্তব্য করেছিলেন অনেকে। আশঙ্কার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আগাম প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু বলা যায় এবারের শীতে উল্টোপথেই হেঁটেছে প্রাণঘাতী ভাইরাসটি।
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (১২-১৩ ফেব্রুয়ারি) করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৯১ জনের। ১০ মাস ১২ দিন পর এটাই সর্বনিম্ন শনাক্ত।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শীতে আমাদের দেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা-এ, প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা-থ্রি, রেসপিরেটরি সিনসিটিয়াল (আরএসভি) ও রাইনোভাইরাস প্রবলভাবে থাকে। এগুলোর কারণেই শীতে সর্দি, কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়ার রোগী বেশি দেখা যায়। এসব ভাইরাস রেসপিরেটরি ভাইরাস। করোনাভাইরাসও একই। আর ভাইরাসের নিয়ম হচ্ছে, শরীরে যখন একটি ঢোকে, সেটা সহজে অন্য ভাইরাস ঢুকতে দেয় না। ঢুকলেও বের করে করে দেয়।’
এ কারণেই মূলত এবারের শীতে দেশে করোনা যে হারে বাড়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল তা হয়নি। তবে আসল কারণ এটাই কিনা তা নিশ্চিত হতে গবেষণা হওয়া উচিত বলেও জানালেন অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।
শীতে করোনার প্রকোপ কমে আসার পেছনে দুটি বিষয় ভাবা হচ্ছে মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, ‘প্রথমত, আবহাওয়াগত কারণে করোনার সংক্রমণের সক্ষমতা কমেছে। আরেকটি হচ্ছে, বাংলাদেশসহ আশপাশে এ ভাইরাসের যে স্ট্রেইন রয়েছে তার সংক্রমণ করার ক্ষমতা কমেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেবল বাংলাদেশে নয়, নেপাল, ভারত, পাকিস্তানেও করোনার প্রকোপ কমেছে। অর্থাৎ আমাদের আশেপাশের দেশগুলো; যেখানে তাপমাত্রা আমাদের মতো এবং যেখানে তীব্র শীত পড়ে না, সেখানেই করোনার প্রকোপ কমেছে। আবার আমাদের অঞ্চলে করোনার যে ভেরিয়েন্ট রয়েছে তার মিউটেশনও এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে।’
‘মিউটেশনের কারণে ভাইরাসের ভিরুলেন্স (আক্রান্ত করার ক্ষমতা) যেমন বেড়ে যায়, তেমনি কমতেও পারে। আমি মনে করি, আমাদের এখানে যে ভাইরাস রয়েছে তার ভিরুলেন্স কম। তাই তীব্রতাও কম।’ যোগ করেন ডা. বে-নজির।
অধ্যাপক বে-নজির আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের শীত ইউরোপের মতো নয়। কিন্তু শীতে যেহেতু বিয়ে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সামাজিক অনুষ্ঠান বেড়ে যায়, তাই সংক্রমণ বাড়তে পারে বলে আগে মতামত দিয়েছিলাম। অবশ্য বাংলাদেশের জন্য এটি একটি সুযোগ। যেহেতু সংক্রমণের মাত্রা কম, তাই আরেকটু কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া যেত। যেমন বেশি বেশি টেস্ট করা, কঠোরভাবে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা, ফ্লাইট বন্ধ করা। এসব হলে সংক্রমণ শূন্যে নামিয়ে আনা যেত।’
শীতে সংক্রমণ বাড়বে, এমন আশঙ্কায় মানুষ আগের চেয়ে মাস্ক পরেছে বেশি। সাবধান হয়েছে। তাই সংক্রমণের হারও কমেছে। এখনও যদি আমরা সাবধান থাকি, তবে সংক্রমণ কমতেই থাকবে বলে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিঅর)-এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।
শীতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশে করোনার প্রকোপ বাড়েনি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের আবহাওয়া আমাদের মতো নয়। তাদের শীত মানে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে যাওয়া। সেসব দেশে শীতের সময় বেশিরভাগ কাজকর্ম চলে ঘরের ভেতর। সেখান থেকেও ছড়াতে পারে ভাইরাস। আবহাওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ভাইরাস যদি চার ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপ পায়, তবে বেশ কিছুক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে। শূন্য ডিগ্রিতে চার থেকে পাঁচদিনও বাঁচে। তাই আমাদের দেশে শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে, এ কথাটা ছিল অনেকটা অনুমাননির্ভর।’