মিয়ানমারে বিক্ষোভ, ধরপাকড়ে দেশজুড়ে আতঙ্ক

1255
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

মিয়ানমারে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজপথে বিক্ষোভ-সমাবেশ করে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এদিকে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে রাতভর অভিযান চালিয়ে লোকজনকে আটক করছে কর্তৃপক্ষ।

বেশ কিছু ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, লোকজন হাড়ি-পাতিল বাজিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর আগমন সম্পর্কে প্রতিবেশীদের সতর্ক করছেন। অভিযান চালিয়ে আটকের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে।

গত ১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকেই লোকজন সেনা সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বেসামরিক সরকারের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবার দাবি জানিয়ে আসছেন।

শনিবার এক ঘোষণায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বিক্ষোভ প্রচারণার বিশিষ্ট সাত আয়োজকের ওপর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

শুক্রবার জাতিসংঘের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে সাড়ে তিন শতাধিকের বেশি মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সামরিক বাহিনী দেশের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই গৃহবন্দী রয়েছেন দেশটির বেসামরিক সরকারের প্রধান অং সান সু চি। গত নভেম্বরে তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) জয় লাভ করে নতুন সরকার গঠন করে। কিন্তু সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে তা বাতিল হয়েছে।

এদিকে, সেনাবাহিনীর ক্রমাগত ধরপাকড়ের ঘটনায় মিয়ানমারে সাধারণ মানুষের দিন কাটছে আতঙ্কে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পরবর্তীতে কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে যেন শঙ্কার শেষ নেই।

স্থানীয় লোকজনের রাত কাটছে নির্ঘুম। এটাই যেন এখন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বেসামরিক লোকজনের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। সামরিক জান্তা সরকারের বিরোধিতা করছেন এমন প্রমাণ পাওয়া গেলেই লোকজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু এমন দুঃসময়েও লোকজন একে অন্যকে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।

দেশের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনের বেশ কিছু ফুটেজে দেখা গেছে লোকজন নিরাপত্তা বাহিনীর গাড়ির শব্দ শুনতে পেয়েই একে অন্যকে সতর্ক করে দিচ্ছেন।

মিয়ানমারে ১৯৬২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে সেনাবাহিনী প্রায় ৫০ বছর ধরে সরাসরি দেশ শাসন করেছে এবং বছরের পর বছর ধরে গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলন কঠোরহাতে দমন করেছে। কিন্তু এবার জেনারেল মিন অং হ্লাইং খুব দ্রুতই নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের কথাও বলেছেন তিনি। জেনারেল হ্লাইং বলেন, ২০১১ সাল পর্যন্ত ৪৯ বছর ধরে মিয়ানমারে যে সেনাশাসন চলেছে তার অধীনে সবকিছু অনেক আলাদা হবে।

তিনি মিয়ানমারে সত্যিকার ‘সুশৃঙ্খল গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। সেনাবাহিনী সম্প্রতি ক্ষমতা গ্রহণের আগে মাঝের প্রায় ১০ বছর দেশটিতে বেসামরিক সরকার দেশ পরিচালনা করেছে। কিন্তু সে সময়ও বেসামরিক সরকার পুরোপুরি স্বাধীন ছিল না। সেখানেও কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে সেনাবাহিনী।

হাজার হাজার মানুষ রাজধানী নেপিদোসহ বিভিন্ন ছোট-বড় শহরে বিক্ষোভ করছে। গত ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান অং সান সু চির মুক্তি দাবি করে আসছে।

গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে অং সান সুচির দল জয়ী হওয়ার পর থেকেই সেনাবাহিনী জালিয়াতির অভিযোগ করে আসছে। এই অভিযোগ এনেই মূলত ক্ষমতা দখলের সাফাই গেয়ে আসছে সেনাবাহিনী। কিন্তু ভোট জালিয়াতির কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। দেশটিতে আগামী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়েছে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন