নিজস্ব প্রতিবেদক:
শষ্যের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবয়ব ফুটিয়ে তোলার কার্যক্রম ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। ধানের চারায় জাতির পিতার চিত্র ফুটিয়ে তোলার কাজ চলছে বগুড়ার শিবগঞ্জের শেরপুর উপজেলার বালেন্দা গ্রামে। যা ‘বিশ্বের সবচেয়ে বড় শস্য চিত্র’ হিসেবে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান করে নিতে পারবে বলে আশা করছেন আয়োজকরা। শুক্রবার সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশে (কেআইবি) ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ কার্যক্রম নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানানো হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ জাতীয় পরিষদের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের সহযোগিতা নিয়ে দুই মাস আগে ১২০ বিঘা জমিতে এই কাজের প্রস্ততি শুরু করে আয়োজক সংগঠন। কোনো নেতার গিনেস বুকের ‘লার্জেস্ট ক্রপ ফিল্ড মোজাইক (ইমেজ)’ শাখার নতুন রেকর্ড হবে এটি। সভাপতির বক্তব্যে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আশা করছি ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের জন্মদিনে আমরা নতুন এ বিশ্ব রেকর্ড অর্জন এবং উদযাপন করতে পারব। তিনি বলেন, আমরা এ কার্যক্রম অনেক আগে শুরু করেছি। বিদেশ থেকে বীজ এনেছি। গিনেজ কর্তৃপক্ষ নির্দেশিত পথে আমরা চলছি। পূর্বের সকল রেকর্ড সম্পর্কে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। আমাদের আয়োজন বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং কোনো নেতার প্রথম এতবড় মুখচ্ছছবি। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববাসীর কাছে আমরা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এ আয়োজন স্মরণীয় করে রাখতে চাই। আমরা মুজিববর্ষে সেরা কর্মসুচি করতে চাই। বঙ্গবন্ধু যে প্রান্তিক মানুষের নেতা, ক্ষুধামুক্ত জনগণের নেতা, সেটা প্রমাণ করতে চাই।
তিনি বলেন, এখান থেকে প্রায় তিন হাজার মণ ধান পাবো। এই ধান প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভাণ্ডারে দেওয়া হবে। ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ শিল্প কর্মের সব তথ্য গিনেস বুকে পাঠাবো। আমরা বঙ্গবন্ধুকে সারা বিশ্বে তুলে ধরতে চাই। বঙ্গবন্ধু মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন। তিনি তৃণমূলের প্রান্তিক মানুষের কথা বলতেন। তার জন্মশত বর্ষে এটা শ্রেষ্ট কর্ম হবে বলে আমি মনে করি। কারণ ২০১৯ সালে চীনে গড়া হয়েছিল ৭৫ বিঘা জমিতে একটি শস্যচিত্র, যার আয়তন ছিল ৮ লাখ ৫৫ হাজার ৭৮৬ বর্গফুট। আর বগুড়ার শেরপুরের বালিন্দার শস্যচিত্রের আয়তন দাঁড়াচ্ছে ১২ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট। মোট ১২০ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি গড়ে তোলা হচ্ছে। মূল শিল্পকর্মের ক্যানভাস গড়া হচ্ছে ১০০ বিঘা জমিজুড়ে। এ ধরনের এত বড় শস্যচিত্র বিশ্বের আর কোনো স্থানে হয়নি। শস্যর ক্যানভাসে জাতির পিতার মুখচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে দুধরনের ধানের চারা ব্যবহার হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ধানের চারা চীন থেকে নেওয়া হয়েছে। বেগুনি ও সবুজ রঙের দুই ধরনের হাইব্রিড ধানের চারা উৎপাদন করা হয়েছে। চারা রোপনের পর থেকে ধান পাকার আগ পর্যন্ত নানা রূপ ধারণ করবে ‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’। ১৪৫ দিনে এই ধান ঘরে ওঠবে। একটি সবুজাভ সোনালি আর অন্যটি বেগুনি রঙের। সেই সঙ্গে রচিত হবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি নিয়ে এক নতুন ইতিহাস।
‘শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু’ জাতীয় পরিষদের উপদেস্টা কৃষকলীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ, সদস্য সচিব কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান, এগ্রিকালচারাল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফ আলী, সহ-সভাপতি হুমায়ুন চিস্তি, মহসিনুল করিম লেবু, এগ্রিকালচারাল জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি আলতাব হোসেন, দৈনিক জনকন্ঠের নগর সম্পাদক কাওসার রহমান মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন।
ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার জানিয়েছে, বিএনসিসির ১০০ জন সদস্য এবং ৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারী বৃহস্পতিবার চারা রোপণ সম্পন্ন করেছেন। এসব কার্যক্রমে খরচ হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা। চীন থেকে বেগুনি ধান এবং দেশীয় সবুজ জনকরাজ ধানের চারা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর অবয়ব দৃশ্যমান করা হবে। ধান পাকার পর গোঁফ, চোখ, চুল, ভ্রু খয়েরি আর অন্য অংশ সোনালী রঙের হবে। উপর থেকে মাঠের মধ্যে স্পষ্ট প্রতিকৃতি দেখা যাবে। আগামী দশ দিন পর থেকেই অনেকটা দৃশ্যমান হবে মুখচ্ছবিটি।