মিয়ানমারে বিক্ষোভ, ধর্মঘটে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা

1270
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির মুক্তি দাবি করেছেন বিক্ষোভকারীরা। সেনাবাহিনীর হাতে আটকের পর থেকে সু চিকে দেখা যায়নি। তিনি কোথায় আছেন, তা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতিও পাওয়া যায়নি।

গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মিয়ানমারের পরিস্থিতি ছিল শান্ত। প্রধান শহরগুলোয় সেনাবাহিনীর টহল চলেছে। তবে গতকাল রাতে ইয়াঙ্গুনে বিক্ষোভকারীরা গাড়ির হর্ন ও থালাবাসন বাজিয়ে প্রতিবাদ জানান। মিয়ানমারের তরুণ ও শিক্ষার্থীরা অসহযোগ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। ফেসবুক পেজে তাঁদের এই কর্মসূচিতে এক লাখেরও বেশি লাইক পড়েছে।

সরকারি হাসপাতালগুলোয় কর্মরত চিকিৎসকেরা সু চির মুক্তি দাবিতে আজ থেকে কাজ বন্ধ রাখবেন বলে জানিয়েছেন। কিছু চিকিৎসাকর্মী নীরব প্রতিবাদ জানাতে বিশেষ প্রতীক ব্যবহার করছেন।

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে সাগাইং অঞ্চলে মংগিওয়া হাসপাতালের অবেদনবিদ নায়িং হিতু অং পদত্যাগ করেছেন। তিনি বিবিসি বার্মিজকে বলেন, ‘এ ধরনের অভ্যুত্থান আর সহ্য করা যায় না। সেনাশাসকের অধীনে আমি কাজ করতে পারব না। তাই আমি পদত্যাগ করেছি। সেনাশাসক দেশের ও জনগণের কথা ভাবে না। পদত্যাগ করেই আমি তাদের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি।’

আরেক চিকিৎসক মিয়ো থেট অ রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা স্বৈরশাসক ও অনির্বাচিত সরকার মেনে নিতে পারি না। তারা যেকোনো সময় আমাদের আটক করতে পারে। আমরা সবাই হাসপাতালে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সেনা অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে মিয়ানমারে। দেশটির প্রধান শহরগুলোয় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীরা স্থানীয় সময় আজ বুধবার থেকে ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন। সেনাশাসনের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন একজন চিকিৎসক। তরুণ ও শিক্ষার্থীরা অসহযোগ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন। এ ছাড়া ইয়াঙ্গুনে বাসিন্দারা বিক্ষোভ করেছেন।

গত সোমবার ভোরে আটকের পর থেকে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি কোথায় আছেন, তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে এনএলডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রে জানা গেছে, সু চি ও প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে।

মিয়ানমারের ক্ষমতা এখন সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের হাতে। বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্রসহ ১১ জন মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীকে বদলানো হয়েছে। মিয়ানমারে নতুন নির্বাচন কমিশন ও পুলিশপ্রধান নিয়োগ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। রাজধানী নেপিডোতে শতাধিক পার্লামেন্ট সদস্যকে আবাসিক বাসভবনে গতকাল পর্যন্ত অবরুদ্ধ করে রাখে সেনাবাহিনী। আজ তাঁদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করেছে। এনএলডি গত নভেম্বরের নির্বাচনের ফল মেনে নিতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

মিয়ানমারে নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে সু চির দল এনএলডি ৮৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছে। পার্লামেন্টের ৪৭৬টি আসনের মধ্যে সেনাসমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি পায় মাত্র ৩৩টি আসন। এই নির্বাচনের ফল ঘিরে সংকট ঘনীভূত হয়। সেনাবাহিনী ও ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নির্বাচনের পর থেকেই ভোটে কারচুপির অভিযোগ তোলে। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার দেশটির নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ নাকচ করে। গতকাল মিয়ানমারের নবনির্বাচিত পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন বসার কথা ছিল। তার কয়েক ঘণ্টা আগে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে।

মিয়ানমারে রাজনীতিকদের আটক ও সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্বনেতারা। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠনও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করবে বলে হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

মিয়ানমারে সামরিক অভ্যুত্থানের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল আগে থেকেই। সু চি তাই অভ্যুত্থানের আগেই চিঠি লিখে রেখেছেন। আটকের আগে সু চির লেখা একটি চিঠি তাঁর দলের চেয়ারপারসন ফেসবুকে পোস্ট করেন। তাতে অভ্যুত্থান মেনে না নিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী সু চি মিয়ানমারে বেশ জনপ্রিয়। তবে ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের প্রতিবাদ না করায় আন্তর্জাতিক মহলে তিনি সমালোচিত হন।

সেনা অভিযানে নির্যাতনের কারণে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। জাতিসংঘের তদন্তকারী দল সেনা অভিযানে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন