২৭ মার্চ ঢাকায় শেখ হাসিনা-মোদি দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা

1279
শেয়ার করতে ক্লিক করুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ঢাকায় পরিকল্পিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকটি আগামী ২৭ মার্চ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করার জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে নয়াদিল্লিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। মাসুদ শুক্রবার নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে দেশে ফিরে আজ তাঁর কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যেহেতু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২৫ বা ২৬ মার্চ এখানে আসার কথা রয়েছে, সেহেতু আমরা তাদের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ২৭ মার্চ করার দিয়েছি।’ পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মোদি ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনে যোগ দেবেন। তিনি জানান, ‘প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনার আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ঢাকা সফর করবেন।’ ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এই সফর অনুষ্ঠিত হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এ ছাড়া মার্চ মাসে হাসিনা-মোদি আলোচনার আগে সচিব পর্যায়ের চারটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। চারটি বৈঠকের মধ্যে স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের বৈঠক ঢাকায় এবং যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) সচিব পর্যায়ের বৈঠক নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে।

পররাষ্ট্রসচিব আরো বলেন, দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বর্তমানে আসন্ন প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনার সময় স্বাক্ষরিত হতে যাওয়া ৪-৫টি সমঝোতা স্মারক নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সচিব পর্যায়ের চারটি বৈঠক থেকে সমঝোতা স্মারক বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতিমূলক কাজে গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট প্রত্যাশা করছি।’

বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনায় উভয় পক্ষ দুই দেশের মধ্যে চলমান সহযোগিতার ব্যাপক ভিত্তিক ক্ষেত্রসমূহের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
তারা মুজিববর্ষ উদযাপন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্কের পঞ্চাশতম বার্ষিকী উপলক্ষে ২০২১ সালের মার্চে মোদির ঢাকা সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তারা বিশ্বের নির্দিস্ট কয়েকটি রাজধানীতে যৌথভাবে বার্ষিকী উদযাপন নিয়েও আলোচনা করেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক তাৎপর্য স্মরণে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের মুজিব নগর থেকে নদিয়ার সড়কটি ‘স্বাধীনতা সড়ক’নামকরণে ঢাকার প্রস্তাব বিবেচনার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতীয় পক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়। পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সড়কটির উদ্বোধন করা হতে পারে। দুই প্রধানমন্ত্রী ফেনী সেতুর উদ্বোধন করবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ সময়োপযোগী সমর্থনের জন্য বিশেষ করে টিকার জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানানো হয়।

আলোচনায় বাংলাদেশ তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি অনুরোধটি পুনর্ব্যক্ত করে এবং ভারতীয় পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে বলে আশ্বস্ত করা হয়।
দুই পররাষ্ট্র সচিব সীমান্ত হত্যা হ্রাস করে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সীমান্ত বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
জোরপূর্বক বাস্ত্যুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের স্থায়ী প্রত্যাবর্তনের জন্য রাখাইন রাজ্যে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে ভারতকে আরো গভীর যুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়। বাণিজ্য সহযোগিতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ এ দেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানির বিভিন্ন শুল্ক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা এবং শুল্ক প্রক্রিয়া সরলীকরণের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ পুর্নব্যক্ত করা হয়।

এই অঞ্চলের যোগাযোগ উন্নয়নে উদ্যোগের জন্য ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল (বিআইএন) কাঠামোর অধীনে মোটর যান চুক্তি দ্রুত চালু করার আহ্বান জানায়। বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে যোগাযোগ সহজ করার জন্য ভারতের মাধ্যমে নতুন স্থল ও রেল পথ ও স্থল বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য ঢাকা নয়া দিল্লীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। মাসুদ বলেন, ঢাকা ও নয়া দিল্লী শিগগিরই পর্যটক ও শিক্ষার্থীদের ভিসা পুনরায় চালু করার কথা বিবেচনা করছে।

শেয়ার করতে ক্লিক করুন