রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার আলোচনায় বসছেন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিবেরা। তাঁদের বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রথম পদক্ষেপ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) গঠন করে কাজের পদ্ধতি চূড়ান্ত হতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেন, মিয়ানমারের পররাষ্ট্রসচিব মিন্ট থো আগামীকাল ঢাকায় আসছেন। তিনি এদিন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে জেডব্লিউজি গঠন ও এর পরিধি চূড়ান্ত করার জন্য বৈঠক করবেন। বিষয়টি নিয়ে গতকাল রোববার পররাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে একটি আন্তমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে। ওই সভায় বাংলাদেশের অবস্থান চূড়ান্ত করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য গত ২৩ নভেম্বর দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই করেছিল বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। ওই চুক্তি অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে জেডব্লিউজি গঠন করে কার্যপদ্ধতি চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও দুই দেশ তা করতে ব্যর্থ হয়েছে। দুই পক্ষ বেশ কয়েকবার এ বিষয়ে মতামত আদান-প্রদান করলেও তাদের মতপার্থক্য দূর হয়নি।
গত ২৩ নভেম্বরের চুক্তির প্রধান বিষয়গুলো হচ্ছে ২০১৬ সালের অক্টোবরের পর থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরানো, নিরাপদ প্রত্যাবাসন, তাদের জীবিকার ব্যবস্থা, তাদের অধিবাসীর সনদ দেওয়া। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তথ্য-উপাত্ত দেওয়ার পর দুই পক্ষ দ্রুততার সঙ্গে বিষয়টি যাচাই করবে। প্রত্যাবাসনের সময় জটিলতা সৃষ্টি হলে এর সমাধান কীভাবে হবে, জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা, রাখাইন কমিশনের প্রতিবেদনের বাস্তবায়ন ও মানবাধিকার—বিষয়গুলোও চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
কক্সবাজারে ১৫ রাষ্ট্রদূত
কক্সবাজার থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছেন ১৫টি দেশের কূটনীতিকেরা। গতকাল দুপুরে তাঁরা কক্সবাজার শহর থেকে সড়কপথে ৩৪ কিলোমিটার দূরে কুতুপালং শিবিরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সে দেশের সেনাবাহিনী যেভাবে হত্যা, ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ নির্যাতন করেছে, সেসব ঘটনা তুলে ধরেন।
বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকের সঙ্গে ছিলেন ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বসনিয়া-হারজেগোভিনা, বুলগেরিয়া, সাইপ্রাস, ইথিওপিয়া, জর্জিয়া, গ্রিস, মরিশাস, পর্তুগাল, স্লোভেনিয়া, ইউক্রেন, নাইজেরিয়া, চেক রিপাবলিক, অস্ট্রিয়া, ঘানা ও কেনিয়ার কূটনীতিকেরা।
গতকাল সকালে কক্সবাজার পৌঁছে বিমানবন্দর থেকে তাঁরা সরাসরি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান। সেখানে তাঁরা জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সঙ্গে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি এবং উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি ত্রাণশিবিরে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, যোগাযোগব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অবস্থানের সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে জেনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন কূটনীতিকেরা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারে প্রতি ধন্যবাদ জানান তাঁরা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কূটনীতিকেরা যান উখিয়ার কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে। প্রথমে তাঁরা শিবিরের ৪ নম্বর ব্লকে স্থাপিত আইওএমের একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এরপর সেখান থেকে বাঁশেরসাকো এলাকায় গিয়ে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ
বাসসজানায়, ওই ১৫টি দেশের কূটনীতিকেরা সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে সঠিক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে ঢাকাকে সমর্থন দেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমারের নাগরিকদের সে দেশে ফেরত নিতে আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার জন্য তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।