মন্ত্রিসভার প্রথম সদস্যের নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছেন বাইডেন
নিউজগার্ডেনবিডিডটকম:যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর মন্ত্রিসভার অন্তত একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের নাম ঘোষণা করতে যাচ্ছেন।
জো বাইডেন-কমলা হ্যারিস প্রশাসনের হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ রন ক্লেইন জানিয়েছেন, বাইডেন তাঁর মন্ত্রিসভার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম ঘোষণা করবেন।
কোন মন্ত্রণালয়ের জন্য কার নাম ঘোষণা করা হচ্ছে, তা জানার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেছেন রন ক্লেইন। তিনি এবিসি টিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন।
বাইডেন গত বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, তিনি অর্থমন্ত্রী (ট্রেজারি সেক্রেটারি) হিসেবে ইতিমধ্যে মনোনীত প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছেন। কোনো পরিচয় উল্লেখ না করলেও তিনি বলেছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির সব পক্ষের দিকে লক্ষ রেখেই অর্থমন্ত্রী বাছাই করা হয়েছে।
আমেরিকার অর্থনীতির চরম এই দুর্বিপাকের সময়ে আসছে প্রশাসনের অর্থমন্ত্রীর মনোনয়নের মধ্য দিয়ে বাইডেন একটা চমক দেখাতে পারেন।
অন্যদিকে, একটি মার্কিন গণমাধ্যম গতকাল রোববার এ–সংক্রান্ত সংবাদে বলেছে, বাইডেন তাঁর প্রথম মনোনীত মন্ত্রী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে পারেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে ডেপুটি সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন অ্যান্টনি ব্লিংকেন। সব ঠিক থাকলে তিনিই বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো সহযোগিতা ছাড়াই ক্ষমতা গ্রহণের সব প্রস্তুতি দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন রন ক্লেইন। স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে আগামী ২০ জানুয়ারির ক্ষমতা গ্রহণ অনুষ্ঠান সীমিত রাখা হবে জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্প প্রশাসন থেকে দেশের নিরাপত্তা সম্পর্কে এখনো কোনো তথ্য দেওয়া হচ্ছে না বাইডেন-হ্যারিস শিবিরকে। কেবিনেটসহ আসছে প্রশাসনে লোক নিয়োগসহ যাবতীয় কাজের জন্য কোনো ফেডারেল অর্থের ছাড়ও দেওয়া হয়নি।
বিজয়ী প্রার্থীকে ক্ষমতা গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য দেশের প্রতিদিনের নিরাপত্তার তথ্য দেওয়া হয়। দেওয়া হয় ফেডারেল অর্থের ছাড়। জেনারেল সার্ভিস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রধান এমিলি মারফির এসব বিষয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার কথা। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে ট্রাম্পের বিরোধ উপস্থাপনের কারণে এমিলি মারফি বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনকে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। এ নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হচ্ছে।
নির্বাচন নিয়ে বিরোধ জটিল করে তোলার চেষ্টা করছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরাজয় না মানার বিষয়ে এখন পর্যন্ত তিনি অনড় অবস্থানে রয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তাঁর অনড় অবস্থান থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছেন রিপাবলিকান পার্টির উল্লেখযোগ্য নেতারা। ট্রাম্পের আইনজীবীদের মধ্যেও বিরোধ প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে।
পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ভোট গণনা বাতিল করার আবেদন জানানো হয়েছিল ট্রাম্প শিবির থেকে। পর্যাপ্ত প্রমাণ ছাড়াই ট্রাম্পের এমন মামলা পত্রপাঠেই বাতিল করে দেন অঙ্গরাজ্যের ফেডারেল বিচারক। পরদিনই ২২ নভেম্বর সার্কিট কোর্টে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আপিল আবেদন জানানো হয়েছে। অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের ওপর ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার রায় কামনা করা হচ্ছে ট্রাম্প শিবির থেকে।
পেনসিলভানিয়ার পর মিশিগানের ভোট সার্টিফিকেশন বিলম্ব করার চেষ্টা করছেন ট্রাম্প।
২৩ নভেম্বর এই অঙ্গরাজ্যের ভোট সার্টিফিকেশন সমাপ্ত করার কথা থাকলেও নির্বাচন বোর্ডের রিপাবলিকান সদস্য নর্মান সিঙ্কেল বেঁকে বসেছেন। ভোটের নিরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত তিনি সার্টিফিকেশনের বিপক্ষে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের ভোট সার্টিফিকেশন করার পর ট্রাম্প শিবির আবার গণনার আবেদন জানিয়েছে। এসব নিয়ে ট্রাম্প সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
ট্রাম্প–সমর্থকদের এখনো বিশ্বাস, সুপ্রিম কোর্টে গেলে কয়েকটি বিরোধপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে আইনসভার ওপর ইলেক্টোরাল ভোট নিয়ে সিদ্ধান্তের রায় নিয়ে আসতে পারবেন ট্রাম্প।
মার্কিন সংবাদ বিশ্লেষক ও আইনজীবীরা এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিচ্ছেন। সবাই বলছেন, ট্রাম্পের সময় শেষ হয়ে আসছে।
ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি গত সপ্তাহে আইনজীবী সিন্ডি পাওয়েলকে সঙ্গে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় তাঁরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মতোই বলেন, নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। সময়মতো তাঁরা সব প্রমাণ উপস্থাপন করবেন।
আইনজীবী সিন্ডি পাওয়েল এক দিন আগেও বলেছেন, নির্বাচনের কারচুপি নিয়ে তাঁদের কাছে কয়েক টন প্রমাণ জমা আছে। এসব একসঙ্গে করাই এখন কঠিন হয়ে উঠেছে বলে তিনি বলেন।
তবে ২২ নভেম্বর ট্রাম্প শিবির থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সিন্ডি পাওয়েল ট্রাম্পের আইনজীবী হিসেবে আর নেই।
রিপাবলিকান পার্টির মূল নেতারা এখনো ট্রাম্পের দাবির বিপক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াচ্ছেন না। যদিও রিপাবলিকান পার্টির প্রভাশালী কিছু লোকজন তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন।
ট্রাম্পের সাবেক প্রধান নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন গতকাল বলেছেন, বাইডেন যথারীতি ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণ করবেন। সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জন বোল্টন বলেছেন, রাস্তার বিক্ষোভকারীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য ট্রাম্প এখন যেন জানালা দিয়ে পাথর ছুড়ছেন।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন নিউ জার্সির সাবেক গভর্নর ক্রিস ক্রিস্টি। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের আইনজীবীরা জাতির জন্য বিব্রতকর হয়ে উঠেছেন। কোনো প্রমাণ ছাড়াই নির্বাচনে ভোট জালিয়াতি বা কারচুপির অভিযোগ বিব্রতকর হয়ে উঠেছে।
মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর লেরি হোগান গলফ খেলা বন্ধ রেখে নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।