প্রতারক সাহেদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
নিউজগার্ডেনবিডিডটকম:করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিয়ে প্রতারণার হোতা রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
সোমবার দুপুর ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন। এই আইনের অপর ধারায় সাহেদকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, উভয় ধারা একসঙ্গে কার্যকর হবে।
রায় ঘোষণার সময় বিচারক ইমরুল কায়েশ বলেন, ‘চার্জশিটের ১৪ সাক্ষির মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। আসামি সাহেদের গাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। সেই বিষয়ে সাক্ষিরা সাক্ষ্য দিয়েছেন। অথচ মামলা চলাকালীন সময়ে সাহেদ একবারও স্বীকার করেননি এই অস্ত্রটি তার। কতটা ধূর্ত হলে আসামি এই কাজ করতে পারে!’
‘সাহেদের যে গাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে ওই গাড়িটি সাহেদের হওয়ার পরও আসামি আদালতে তা অস্বীকার করেন। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে সক্ষম হয় যে, গাড়িটি সাহেদের। ৬০ কিস্তিতে ২০ লাখ টাকায় গাড়িটি কিনেছেন তিনি। আসামি খুবই চতুর ও ভদ্রবেশী অপরাধী। এ ধরনের আসামিরা আদালত থেকে কোন অনুকম্পা পেতে পারেন না। তাই অস্ত্র আইনের সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়’, বলেন সিনিয়র জন কে এম কে এম ইমরুল কায়েশ।
এসময় অস্ত্র মামলার রায়ে সাহেদকে অস্ত্র রাখার দায়ে যাবজ্জীবন ও গুলি রাখার দায়ে পৃথক ধারায় ৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর ঢাকার এক নম্বর স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য এ তারিখ ঠিক করেছিলেন।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউর তাপস কুমার পাল জানান, অবৈধ অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আদালত সেই সর্বোচ্চ কারাদণ্ডের সাজাই প্রদান করেছেন। এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর মামলাটির যুক্তিতর্কের শুনানি শেষে বিচারক রায় ঘোষণার এ দিন ঠিক করেন।
রায় ঘোষণার আগে বেলা ১১ টার দিকে সাহেদকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। তাকে প্রথমে আদালতের গারদ খানায় রাখা হয়। পরে এজলাসে তোলা হয়। মামলায় ১৪ সাক্ষীর মধ্যে বিভিন্ন সময় ১১ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।
করোনাভাইরাসের টেস্ট নিয়ে জালিয়াতির বিস্তর অভিযোগ উঠে সাহেদের বিরুদ্ধে। পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে।
এ ঘটনার পর পালিয়ে যান সাহেদ। ১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে হেলিকপ্টারে করে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনা হয়।
করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্টসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ১৬ জুলাই সাহেদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এরপর ১৯ জুলাই তাকে নিয়ে উত্তরার বাসার সামনে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ।
সেখানে সাহেদের নিজস্ব সাদা প্রাইভেটকারে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ১০ বোতল ফেনসিডিল, একটি পিস্তল এবং একটি গুলি উদ্ধার করা হয়। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করা হয়।
৩০ জুলাই ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের মামলায় চার্জশিট দাখিল করা হয়। এরপর ২৭ আগস্ট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
২০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আদালত। মামলাটির আট কার্যদিবসে বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা হয়।
উল্লেখ্য, করোনা টেস্ট নিয়ে প্রতারণার হোতা সাহেদের বিরুদ্ধে সারাদেশে অর্ধশত মামলা রয়েছে। এর বেশিরভাগই প্রতারণার অভিযোগে করা।